অর্ণব দাস, বারাসত: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) র্যাগিংয়ের অভিযোগে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এরই মাঝে অন্ধ্রপ্রদেশের এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore)বাসিন্দা এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলল পরিবার। র্যাগিংয়ের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। যাদবপুরের পর এমন ঘটনায় ফের নতুন করে শোরগোল। সুবিচারের আশায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়েছে মৃতের পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালির বাসিন্দা সুদীপ চৌধুরী। তিনি মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি কলেজের চিকিৎসক। তাঁর একমাত্র সন্তান বছর উনিশের সৌরদীপ চৌধুরী মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট এন্ট্রান্সে (JEE) ভাল নম্বর পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আমেরিকায় চাকরি করার স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) গুন্টুর জেলার বিজয়ওয়াড়ার কেএল ইউনিভার্সিটিতে বি টেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভরতি হয় সৌরদীপ।
দেখুন ভি়ডিও:
গত ১৭ জুলাই থেকে সে হস্টেলে (Hostel) থাকা শুরু করে। এর সাতদিনের মধ্যেই ২৪ জুলাই তাঁর বাড়িতে খবর আসে, ১৩ তলা হস্টেল বিল্ডিংয়ের ১১তলা থেকে দুপুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। পরের দিন সুদীপ চৌধুরী বিজয়ওয়াড়ায় পৌঁছেই খুনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে সরব হন। তাঁর অভিযোগ, ”একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের দেহ রাখা ছিল। পুলিশের পোশাক পরে কয়েকজন সেখানে আসে। আমি থানায় যেতে চাইলে যেতে দেয়নি। সাদা কাগজে অভিযোগ জানাই কিন্তু কোনও রিসিভ কপি পাইনি। প্রথমে ওঁরা ময়নাতদন্তও করতে চায়নি। আমি জোর করে ময়নাতদন্ত করাতে বাধ্য করাই। সম্ভবত সেখানে ভিডিওগ্রাফিও করেনি। হোস্টেলে যেতে চাইলেও যেতে দেয়নি। ছেলের সহপাঠীদের সঙ্গেও কথা বলতে দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।”
বাবা সুদীপবাবুর আরও দাবি, ছেলের সমস্ত জিনিসপত্র প্যাকিং করে তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছেলের দেহ নিয়ে এসে কলকাতায় শেষকৃত্য করবার পর থেকে বারাসতের নবপল্লির শ্বশুরবাড়িতেই রয়েছেন সুদীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী। শুক্রবার সেখান থেকেই খুনের অভিযোগ তুলে মৃতের বাবা পেশায় চিকিৎসকের দাবি, ১১তলা থেকে পরে মৃত্যু হলে শরীরে যেরকম চিহ্ন থাকা উচিত তা ছিল না। ছেলের বাঁ হাত মুচড়ে দেওয়ার মতো ছিল। পাঁচ-ছ’টি দাঁত ছিল না। বাঁ দিকের গালে আঘাতের চিহ্ন ছিল, ঘুষি বা ভারী কিছু দিয়ে মারলে যে রকম হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন তিনি। সুদীপবাবু জানান, ”আমাকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় তরফে লিখে দিতে বলে যে তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি তাদের এইরকম কোন কিছুই লিখে দেব না বলে জানাই। টাকা ফেরত দিতে না বললেও ওরা জোর করে ওরা টাকা পাঠিয়ে দেয়। তারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তরফে আর কোনও যোগাযোগ করেনি।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হতেই তিনিও সুবিচারের আশায় প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলের কাছেই অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”আমি বড় ক্লান্ত। আমার শরীর বলে আর কিছু নেই। ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর খাওয়াদাওয়া, কথা বলা বন্ধ। ঠিক করে ঘুমায়নি। আমার ছেলে ১১তলা থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেনি। ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে খুন করা হয়েছে।” সুবিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, লোকসভার স্পিকার-সহ সমস্ত স্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন সুদীপবাবু। চান, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়ে অভিযুক্তরা শাস্তি পাক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.