শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বানান (Spelling) ভুল করেছিল বছর চারেকের শিশু। ভুল সংশোধন না করিয়ে, নতুন করে না শিখিয়ে গৃহশিক্ষিকা যা করলেন, তারপর ‘শিক্ষিকা’র পরিচয়টাই লজ্জার মুখে দাঁড়ায়। গোটা শিক্ষক সমাজেরই মাথা হেঁট হওয়ার উপক্রম। চার বছরের শিশুর উপর ভয়ংকর শারীরিক নির্যাতন চলল। গৃহশিক্ষিকার (private tutor) লাঠির আঘাতে হাঁটু ভেঙে গেল শিশুর! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ির ভগৎ সিং কলোনি এলাকায়। যদিও ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়। ঘটনার কথা জেনে আইসি জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলেই তাঁরা শিশু নির্যাতনের মামলা রুজু করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ভগৎ সিং কলোনির বাসিন্দা ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, গত শুক্রবার প্রতিবেশী এক গৃহশিক্ষিকার কাছে ছেলেকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন তারা। বাড়ি ফিরে পায়ে যন্ত্রণার কথা জানায় শিশু। তার মা রেণু যাদব জানান, কীভাবে ব্যথা পেয়েছে, তা ছেলেকে জিজ্ঞেস করতেই চমকে ওঠেন। শিশুটি বলে, বানান না পারায় লাঠি দিয়ে মেরেছেন ওই শিক্ষিকা। তাতেই পা ভেঙে গিয়েছে। ছেলের পায়ে অসহ্য ব্যথা হওয়ায় এক্স-রে (X-ray) করানো হয়। তাতে দেখা যায়, হাঁটুর কাছে হাড় ভেঙেছে তার।
এনিয়ে পাড়ায় তুমুল হইচই শুরু হয়। রেনু যাদব ওই শিক্ষিকাকে এ নিয়ে বলতে গেলে তিনি দাবি করেন, পড়া না পারায় শিশুটিকে লাঠি দিয়ে মেরেছিলেন। কিন্তু তাতে পা ভাঙতে পারে, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছে শিশুর পরিবার। কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার জানান, অভিযোগ হাতে পাননি। তা পেলে আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনে তদন্ত করে দেখা হবে। আপাতত পায়ে প্লাস্টার নিয়ে চার বছরের শিশু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বানান না পারা তাকে পড়াশোনার জগৎ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেল, তা বলাই বাহুল্য।
সমাজে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক ভাবী নাগরিক গড়ার পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক। শ্রদ্ধা-স্নেহ-আশ্বাস-ভরসা-ভীতি সবকিছুর মিশ্রণ। এর কোনও একটি উপাদানে গরমিল হলেই সমীকরণ বদলে যায়। জলপাইগুড়ির চার বছরের ছোট্ট শিশুর জীবনে ঠিক এমনটাই ঘটল। ভাঙা হাঁটুর সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গেল হয়ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.