ছবি: প্রতীকী।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সময়মতো টাকা জোগাড় হয়নি। তাই স্কুলের পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করতে পারেনি নবম শ্রেণির ছাত্র। তাছাড়া স্কুলের উপস্থিতির হারও কম ছিল। পরীক্ষায় বসতে না পেরে মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হাবড়ায় চন্দন জোয়ারদার নামে এক ছাত্র। অন্তত পরিবারের অভিযোগ তেমনই। শনিবার সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আজ সকালে আর জি কর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
হাবড়ার বাসিন্দা চন্দন খাড়ো কেএমআর ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। স্কুল সূত্রে খবর, পড়াশোনায় দারুণ উৎসাহ তার। শুধু পড়াশোনা নয়, স্কুলের স্পোর্টস থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজেও সবসময় অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গিয়েছে চন্দনকে। কিন্তু সম্প্রতি সংসারের অভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছিল। পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, চন্দনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কাজ করতে পারতেন না। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনওক্রমে সংসার চালাচ্ছিলেন। চন্দনকেও সংসারের হাল ফেরানোর কাজে নামতে হয়েছিল পরিস্থিতি সাপেক্ষে। স্কুলের দাবি, রোজগারের খোঁজ করতে গিয়ে চন্দন ঠিকমতো স্কুলে আসতে পারছিল না। উপস্থিতি ক্রমশই কমছিল তার। এমনকী পরীক্ষায় বসার জন্য যথেষ্ট উপস্থিতিও ছিল না। তাই তাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, পরিবারের দাবি, পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০০ টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেনি চন্দন। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ফর্ম ফিলআপ না হওয়ায় তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। তাই মানসিক অবসাদেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বছর পনেরোর কিশোর। চন্দনের মৃত্যুর জন্য তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকেই দায়ী করছেন। যদিও অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর দাবি, চন্দনের সক্রিয়তা, মনোযোগ, পড়াশোনার প্রতি উৎসাহের জন্য স্কুলের শিক্ষকদেরও প্রিয় ছিল সে। কিন্তু ইদানিং তার আচরণ মোটেই ছাত্রের মতো ছিল না। বরং পরিবারের জন্য রোজগারের দিকে মন চলে গিয়েছিল তার। পরীক্ষায় বসার জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিতি তো ছিলই না, প্রজেক্ট রিপোর্টও ঠিকমতো জমা করতে পারেনি চন্দন। এসব কারণেই তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। স্কুলের নিয়ম মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই তার মৃত্যুর দায় স্কুলের নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে বিষ খায় চন্দন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাতেই আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকালে সেখানেই মৃত্যু হয়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি, পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে গিয়েই ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছিল না সে। যার জেরে এমন একটি ঘটনা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.