সৌরভ মাজি, বর্ধমান: এক ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা ঘিরে দিনভর উত্তাল বর্ধমানের এমবিসি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং। শুক্রবার জেলার এই সরকারি পলিটেকনিক কলেজে তুমুল বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষের মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ছাত্রের পরিবারের তরফেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। অধ্যক্ষের গ্রেপ্তারির দাবিও তুলেছে পড়ুয়াদের একাংশ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার রাজনগরের বাসিন্দা কৌস্তভ তোষ। বর্ধমানের এমবিসি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেকানিক্যালের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলেজ হস্টেলে নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়ে কৌস্তুভ। হস্টেলে অন্য আবাসিক চোখে পড়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁকে ভরতি করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কৌস্তুভ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হস্টেলের বিভিন্ন বর্ষের পড়ুয়ারা কলেজের গেটে বিক্ষোভ শুরু করেন। অধ্যক্ষ অসিতকুমার মান্নার অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন তাঁরা। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছান কৌস্তভের বাবা মদনমোহন তোষ ও মা স্বর্ণলতা তোষ।
পরকীয়ায় প্রতিবাদের মাশুল, মাথা নেড়া করে স্ত্রীকে হেনস্তা যুবকের
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিশৃঙ্খলার অভিযোগে কৌস্তুভকে হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যদিও সহপাঠীদের দাবি, গোটাটাই মিথ্যা অভিযোগ। সহপাঠী অয়ন ঘোষ, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সঞ্জীব সরকারদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে অধ্যক্ষ কৌস্তভের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করছেন। জানা গিয়েছে, গত দুর্গাপুজোয় কলেজের ছুটির দিনই কৌস্তুভকে হস্টেল ছেড়ে যেতে বলেছিলেন অধ্যক্ষ। কৌস্তুভ তাঁকে জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত হস্টেলে থাকতে দিলে, তাঁর বাড়ি যেতে সুবিধা হবে। সঞ্জীবদের দাবি, অধ্যক্ষের নির্দেশ না মেনে নিজের অসুবিধার কথা বলায় রুষ্ট হন তিনি। সেই থেকেই কৌস্তভের সঙ্গে নানা অছিলায় দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। শুরু হয় মানসিক নির্যাতনও। এমনকি কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে দাবি কৌস্তুভের সহপাঠীদের।
বাড়ি থেকে উদ্ধার শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ, স্ত্রীর চাপে আত্মহত্যা দাবি পরিবারের
এদিন হাসপাতালে কৌস্তভের মা স্বর্ণলতাদেবী বলেন, ‘ছেলে যদি বিশৃঙ্খল হয়, তাহলে তাঁকে বহিষ্কারের আগে অধ্যক্ষ আমাদের অন্তত একবার জানাতে পারতেন। ছেলের উপর তিনি মানসিক নির্যাতন করতেন, তার জন্যই আমার ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমরা অধ্যক্ষের গ্রেপ্তারির দাবি জানাচ্ছি।’ কলেজের টিএমসিপি নেতা পিকু ক্ষেত্রপাল ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অধ্যক্ষ অসিতকুমার মান্না অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রমাণ মেলায় কৌস্তুভের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.