শ্রীকান্ত পাত্র ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: শিক্ষক না আসায় স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার চন্দ্রকোণার ঘোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ খবর পেয়ে স্কুল গিয়ে বিক্ষোভ সামাল দেন চন্দ্রকোনা এক নম্বর ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌশিক ঘোষ৷ তাঁর আশ্বাসে বিক্ষোভ উঠে যায়৷ অন্যদিকে, দুর্গাপুরে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বিক্ষোভ৷ ঢুকতে বাধা পেয়ে ফিরে যেত হন অধ্যক্ষা৷ বাধা দেওয়ার অভিযোগ অধ্যাপিক৪দেরও৷
এদিন চন্দ্রকোণার ঘোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষক ছুটিতে ছিলেন৷ সহকারী শিক্ষকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই এমন ঘটনাটি ঘটেছে৷ তাঁকে শোকজ করা হবে৷ গোটা বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে জানানো হয়েছে৷” অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ তুলে নিলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বদলির দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা৷ গ্রামবাসীদের দাবি, অবিলম্বে এই শিক্ষকের বদলি করতে হবে৷ তা না হলে লাগাতার বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা৷
অভিযোগে প্রকাশ, চন্দ্রকোণা এক নম্বর ব্লকের ঘোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম ছুটি নিয়ে সহকারী শিক্ষক সন্দীপ রায়কে দায়িত্ব দিয়ে যান৷ সোমবার সন্দীপবাবু স্কুলে যাননি বলে অভিযোগ৷ বেলা ১২টা পর্যন্ত কোনও শিক্ষক না আসায় স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিবাবকরা৷ জানা গিয়েছে, শিক্ষক না থাকায় ছাত্র ছাত্রীরা স্কুল চত্বরেই খেলতে শুরু করে দেয়৷ এর ফলে একটি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী পড়ে গিয়ে তাঁর পা কেটে যায়৷ এরপরই বিক্ষোভ চরমে উঠে৷ গণ্ডগোলের খবর পেয়ে দ্রুত স্কুলে পৌঁছে যান অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌশিক ঘোষ৷ তাঁর নির্দেশে ছুটি বাতিল করে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক রাজীববাবু৷
[কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণেও সাড়া মিলল না, বাতিল বাবুলের অনুষ্ঠান]
কিন্তু সহকারী শিক্ষক সন্দীপ রায়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি কৌশিকবাবু৷ পরে তাঁর আশ্বাসে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ তুলে নেন৷ গ্রামবাসী পীযুষ ঘোষ, পরেশ পাঁজা, গুরুপদ ঘোষ, হারাধন পাঁজারা বলেন, “সহকারী শিক্ষক সন্দীপ রায় প্রায়ই অনিয়মিত স্কুলে আসেন৷ এসেই চেয়ারে ঘুমোতে থাকেন৷ আমরা বারবার বিষয়টি লক্ষ্য করে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম৷ কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি৷ শিক্ষকরা না থাকায় পড়ুয়াজেকর কী হাল হয় আজ আমরা তা চোখে দেখলাম৷ একজন ছাত্রীর পা কেটেছে৷ তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হয়েছে৷ এরপরও যদি ওই শিক্ষক বদলি না হয় আমরা এবার লাগাতার স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাব৷ এর দায় নিতে হবে প্রশাসনকে৷”
অন্যদিকে, দুর্গাপুরে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান৷ ঢুকতে বাঁধা পেয়ে ফিরে গেলেন অধ্যক্ষা৷ বাঁধা দেওয়া হয় অধ্যাপিকাদেরও৷ আদতে ‘তোলাবাজি’র বিরুদ্ধাচরণ করাতেই এই বিক্ষোভ বলে দাবি অধ্যক্ষার৷ দুর্গাপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি৷ এই অভিযোগে সোমবার পরীক্ষা চলাকালীনই গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে কলেজের কয়েকজন ছাত্রী৷
[মাঝেরহাটের পর বিপর্যয় কাকদ্বীপে, ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ সেতু]
অধ্যক্ষা মধুমিতা জাজোদিয়া কলেজে ঢুকতে গিয়েও বাঁধার মুখে পড়েন৷ বাধ্য হয়ে ফিরে যান তিনি৷ ছাত্রীদের দাবি, বাৎসরিক ফি ১,০৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে একলাফে ২,৬০০ টাকা হয়েছে৷ এই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা৷ ফি না কমানো পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে দাবি করে ছাত্রীরা৷ আন্দোলনের মাঝেই কলেজের অধ্যাপিকা মধুমিতা জাজোদিয়া কলেজে ঢুকতে চাইলে বিক্ষোভরত ছাত্রীদের বাধায় ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন৷
দুর্গাপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মধুমিতা জাজোদিয়া বলেন, ‘‘বর্তমানে কলেজে কোন স্টুডেন্ট ইউনিয়ন নেই৷ কলেজে ভরতির সময় বন্ধই ছিল ইউনিয়ন রুম৷ পরে ওটা ছাত্রীদের অন্যতম কমন রুম হিসাবে ব্যাবহার করা হতো৷ কলেজের কর্মী-সহ অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসতে থাকে যে, কলেজেরই কিছু বহিরাগত ও বর্তমান ছাত্রীরা অন্যান্যদের কাছ থেকে টাকা তুলছে৷ আমি বাধা দিই৷” সেই থেকে কিছু ছাত্রীদের সঙ্গে মনোমালিন্য বাড়তে থাকে অধ্যক্ষার৷ তার জেরেই এই বিক্ষোভ বলে কলেজের একাংশ কর্মী ও অধ্যাপিকাদের দাবি৷ যদিও ফি বৃদ্ধির সম্পর্কে অধ্যক্ষ মধুমিতা জাজোদিয়া বলেন, “স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই কিছু ফি বৃদ্ধি হয়েছে৷ তাতে অন্যান্য ছাত্রীদের কোনও সমস্যা হচ্ছেনা৷ নিয়ম মাফিকই ফি জমা করছে তারা৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.