অভিরূপ দাস: নিরীহ গোবেচারা মুড়ি। আমগেরস্তের রোজকার খাবার। তার আড়ালেই ঘাপটি মেরে সাক্ষাৎ মৃত্যু। কে জানত? বুঝতে পারেননি বকুল মাঝিও। বর্ধমানের বাসিন্দা বছর তেইশের যুবক মুড়ি খেতে গেয়েই পড়েছিলেন মারাত্মক বিপদে। একমুঠো মুড়ি সবে গালে ফেলেছেন, দম-টম আটকে একাকার অবস্থা। মুড়ির চালুনির তার মিশে ছিল মুড়িতে। দুর্ঘটনাবশত তা চলে এসেছিল ঠোঙায়। সোজা একেবারে খাদ্যনালিতে গিয়ে আটকে গিয়েছিল ওই তারের টুকরো। চিকিৎসক বলছেন, ফুসফুসে চলে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত।
মুড়ির মধ্যে এমন তারের টুকরো চলে আসার ঘটনা নতুন নয়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. প্রণবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একটা দুটো নয়। মুড়ির মধ্যে ‘বিজাতীয়’ বস্তু গলায় আটকে হাসপাতালে আসার সংখ্যা ভূরি ভূরি। চিকিৎসকের কথায়, চালুনির তারই শুধু নয়, ঠোঙার পিনও অনেক সময় চলে যায় মুখের মধ্যে। রাস্তা থেকে ঝালমুড়ি কিনে খাওয়ার সময় তাই সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: মেঘলা আকাশ সত্ত্বেও কেন রোয়িংয়ের অনুমতি? রবীন্দ্র সরোবরে ছাত্রমৃত্যুতে একাধিক প্রশ্নের ভিড়]
কীভাবে আসে এই টুকরো? মুড়ি ভাজার রীতি বহু প্রাচীন। বিশেষ পদ্ধতিতে ধান থেকে চাল তৈরি করে মুড়ি ভাজার উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর উনুনে কড়াই বসিয়ে হাতের কায়দায় বালির মধ্যে চাল নেড়ে মুড়ি ভাজা হয়। সব শেষে চালুনিতে ছেঁকে নেওয়া হয় সেই মুড়ি। এমন সময়ই চালুনির তার মিশে যায় মুড়ির মধ্যে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে (Burdwan Medical College) বকুল মাঝির প্রাণ বাঁচিয়েছেন যে তিনজন তাঁদেরই একজন ডা. শাশ্বত সরকার। চিকিৎসকের কথায়, “মুড়ি ভাল করে বাছা হয় না। চেষ্টা করবেন পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে মুড়ি কিনে খেতে। চোখ রাখবেন ঠোঙার দিকে। গল্প করতে করতে খেতে বারণ করা হয় এই কারণেই।”
সম্পূর্ণ অ্যানাস্থেশিয়া করেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে বকুল মাঝির অস্ত্রোপচার করা হয়। ইএনটি বিভাগের ডা.ঋতম রায়ের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার করেন ডা. শাশ্বত সরকার, ডা. সৃজিত সুর। রিজিড ইসোফেগাসস্কোপির (Rigid Esophagoscopy) মাধ্যমে বের করে আনা হয় ওই চালুনির তার। এই পদ্ধতিতে মুখ দিয়ে একটি শক্ত সরু নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টিউবের সামনে থাকে আলো এবং লেন্স। যার সাহায্যে চিকিৎসক বাইরে থেকেও দেখতে পান খাদ্যনালির অংশ।
[আরও পড়ুন: ঘুরপথে কলকাতায় মাঙ্কিপক্স ঢুকছে না তো? জ্বর-মাথার যন্ত্রণায়ও আইসোলেশনের পরামর্শ]
মুড়ি খেতে খেতে গলায় আটকে গিয়েছে কিছু? এসএসকেএম হাসপাতালের কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সৌত্রিক কুমার জানিয়েছেন, এমন অবস্থায় নিজের গলায় হাত ঢুকিয়ে বের করার চেষ্টা না করাই শ্রেয়। দ্রুত স্থানীয় কোনও হাসপাতালে গিয়ে এক্স-রে করাতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.