সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আজ থেকে ঠিক সাড়ে ছ’বছর আগের কথা৷ সময়টা ২০১১ সালের নভেম্বর৷ পুরুলিয়া-সহ গোটা জঙ্গলমহলের অধিকার মাওবাদীদের হাতে৷ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অনুন্নয়ন ছিল মাওবাদীদের প্রধান হাতিয়ার৷ আর সেটাকেই পুঁজি করে শেষবারের মতো ডাকা হয়েছিল বনধ৷ মাওবাদীদের একটি গণসংগঠনের ডাকা বনধে প্রভাবও পড়েছিল যথেষ্ট৷ শুনশান ছিল তখন জঙ্গলমহল৷ কিন্তু, গত আট বছরে আমূল বদলে গিয়েছে জঙ্গলমহল৷ ফিরছে উন্নয়ন৷ কিন্তু, ভয় কমেনি৷ আজও কমেনি আতঙ্ক৷ জঙ্গলমহল থেকে মাওবাদীরা পাততাড়ি গোটানোর প্রায় সাড়ে ছ’বছর পর এই প্রথম কোনও বনধে গৃহবন্দি থাকল গোটা বলরামপুর শহর৷
পুরুলিয়া বলরামপুর শহর৷ বেশ জমজমাট৷ কয়েক লক্ষ মানুষের বসবাস৷ অবস্থানগত গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট৷ খুব সহজে ঝাড়খণ্ড-জামশেদপুরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব৷ ধানবাদ-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের সৌজন্যে এলাকার অর্থনীতিতেও আমূল পরিবর্তন এসেছে৷ একদা মাও আধিপত্যে থাকা বলরামপুরে ফিরেছে ছন্দে৷
প্রায় সাড়ে ছ’বছর সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল৷ কিন্তু, মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ ভাঙল শান্তি৷ ভোট পরবর্তী হিংসার খবরে নতুন করে আতঙ্ক ফিরল বলরামপুরের অলিতে-গলিতে৷ এতদিনের মাও আতঙ্ক থেকে বেরিয়া আসা বলরামপুর ফের একবার বনধ-হিংসার রাজনীতির জেরে থমকে থাকল ১২ ঘণ্টা৷
বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধে আজ দিনভর থমথমে পুরুলিয়ার এই শহর৷ এদিন সকাল থেকে কার্যত শুনশান বলরামপুর৷ অশান্তি এড়াতে মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত বাহিনী৷ তবে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হলেও আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের মধ্যে৷ দোকান-বাজার-অফিস-আদালত শূন্য রেখে এদিন দিনভর গৃহবন্দি হয়ে রইল লালমাটির দেশের প্রান্তিক শহরের বাসিন্দারা৷
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাওবাদী রাজ চলে যাওয়ার পর অনেক বনধ হয়েছে৷ একাধিক ইস্যুতে বনধ হয়েছে৷ কিন্তু, বনধ ডাকা হলেও পথে নেমেছিলেন স্থানীয়রা৷ কিন্তু, এবার পরিস্থিতির অনেকটা আলাদা৷ মাওবাদী কায়দায় বিজেপির কর্মীকে ‘খুনে’র ঘটনায় চোরা আতঙ্ক ছড়িয়ে৷ তার উপর আজ সকাল থেকে বিজেপি কর্মীদের মিছিল, সঙ্গে বনধের সমর্থনে বাইকে বিজেপির নজরদারির টিমকে রাস্তায় রাস্তায় দাপাতে দেখেও পথে বেরনোর হিম্মত দেখাতে পারেননি আমজনতা৷ পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, কর্মী খুনে বিজেপির চোখ রাঙানি ও জঙ্গলমহলে ‘হিন্দুত্ববাদী’ গঠনগুলির তাণ্ডবের জেরেই বনধের দিনে গৃহবন্দি থেকে কার্যত প্রাণরক্ষা পথই বেছে নিলেন বলরামপুরের খেটে খাওয়া প্রান্তিক বাসিন্দারা৷
ছবি- সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.