টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: শরৎকালে সপরিবারে উমা আসেন বাপের বাড়ি। সারা বছর তারই অপেক্ষা বাংলার ঘরে ঘরে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে আর কয়েকদিন বাদেই মর্ত্যে নামবেন মা, এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই কঠিন পাথরের বুক কেটে ছাতানার পাথর শিল্পীর ছোঁয়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর পাড়ি দিতে প্রস্তুত দুর্গার ‘শীলা মূর্তি’।
বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে পাথর শিল্পীদের ছোট্ট একটি গ্রাম শুশুনিয়া। এই গ্রামের বাসিন্দা অনাথবন্ধু কর্মকার। বাঁকুড়ার প্রান্তিক এই গ্রামে পাথরশিল্পীরা বসবাস করেন। বাড়ির সামনে হাজারো রহস্য বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা শুশুনিয়া পাহাড়ের বুক চিরে পাথর বের করে বিভিন্ন দেবদেবীর মুর্তি ,থালা, বাড়ি-সহ হাজারো শিল্পকর্ম তৈরি করেন এই পাথর শিল্পীরা। এই শিল্পীদের আঙুলের ফাঁকে ধরে থাকা ছেনি ও হাতুড়ির আঁকিবুকি খেলায় কঠিন পাথর থেকেই ফুটে ওঠে হাজার সব শিল্প, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। করোনা আবহে গত ৬ মাস ধরে ৭ ফুট বাই সাড়ে ৪ ফুট কঠিন পাথরকে কেটে তৈরি করে ফেলেছেন মা দুর্গার প্রতিমা। শুধু দুর্গা প্রতিমাই নয়, মায়ের সঙ্গে পাথর কেটে তৈরি হয়েছে তাঁর ছেলে-মেয়ে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতীর মূর্তিও।
শিল্পীর কথায়, কাজ শুরু করার সময় মা দুর্গার জন্য সাড়ে চার ফুট চওড়া ও সাড়ে ফুট সাত উচ্চতার পাথরটি আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে। তখন এই পাথরটির ওজন ছিল প্রায় ৫ টনের কাছাকাছি। ওই পাথরটি কেটে মা দুর্গা, সিংহ, মহিষ তৈরির পর প্রতিমাটির ওজন হয়েছে প্রায় আড়াই টনের কাছাকাছি। অন্যদিকে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতীর মূর্তি তৈরি হওয়ার পর ওজন দাঁড়িয়েছে সাত থেকে আট ক্যুইন্টাল।
জানা গেল, এই মূর্তি যাবে সোনারপুরের চৌহাটি মিলন সমিতির মাতৃমন্দিরে। চলতি বছর দুর্গাপুজায় (Durga Puja 2020) এই মিলন সমিতির অন্যতম আকর্ষণ হল ‘ওজনদার দুর্গা’। বছর কয়েক আগে রাজ্যজুড়ে সাড়া ফেলেছিল ‘বড়দুর্গা’। চৌহাটি মিলন সমিতির সম্পাদক উত্তম সরকার। তিনি বলছেন, “এবছর আমাদের পুজো ৬৫তম বছরে পড়েছে। দুর্গাপুজার পর প্রতিদিন ওই মূর্তিতেই আমাদের নিত্যপুজো হয়। কয়েক বছর আগেই মায়ের মন্দির তৈরি করেছি, তাই এবার স্থায়ী প্রতিমা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খরচ হচ্ছে ৩ লক্ষ টাকা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.