Advertisement
Advertisement
Royal Bengal Tiger

কোন পথে জিনাতের পুরুষ সঙ্গী? রয়্যালের মন বুঝতে অপারগ বাংলা- ঝাড়খণ্ড

ইউটার্ন নিলে অযোধ্যা, স্ট্রেট ড্রাইভে বান্দোয়ান! বাঘের আতঙ্কে কাঁটা পুরুলিয়াও।

Still no trace of Odisha Royal Bengal Tiger

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ। জাতীয় সড়ক ৩৩ ঝাড়খণ্ডের পাটা টোল প্লাজার কাছে চাষের জমিতে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও

Published by: Paramita Paul
  • Posted:January 6, 2025 11:00 pm
  • Updated:January 6, 2025 11:01 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাতসকালে সবজির জমি জুড়ে বড় বড় পায়ের ছাপ দেখে আঁতকে উঠেছিলেন কৃষক ঠাকুর মাঝি। সোমবার বেলা গড়াতেই বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি ওই পায়ের ছাপ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। আর তারপরেই ভয়ে কাঁটা ঝাড়খন্ডের সরাইখেলা-খরসোওয়া জেলার চান্ডিল থানার পাটা, এদেলবেড়ার মত শহর ঘেঁষে থাকা গ্রামগুলি। ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া বনবিভাগের চান্ডিল রেঞ্জের চৌকা থানার বালিডি জঙ্গল থেকে যে দলমার দিকে মুখ ঘুরিয়েছে জিনাতের পুরুষসঙ্গী। গরু মেরে, বাছুর খেয়ে ছদিন বালিডি জঙ্গলে কাটানোর পর।

জিনাতের গলায় ছিল রেডিও কলার। তার মতিগতি সবই ছিল নিয়ন্ত্রণে। তার পুরুষসঙ্গী এই রয়্যালের গলায় সেই যন্ত্র নেই। তাই নিশ্চিতভাবে তার গতিবিধি যেমন বোঝা যাচ্ছে না। তেমনই আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ট্র্যাক করতে না পারায় তার স্বভাবও অজানা ঝাড়খণ্ড-বাংলার বন বিভাগের কর্তাদের। যেভাবে সোমবার ভোর রাতে জাতীয় সড়ক ৩৩ (তামাড়-বুন্ডু-চৌকা- জামশেদপুর) পার হয়ে পাটা টোল প্লাজা ঘেঁষে দলমামুখী হয়েছে। তাতে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ মনে করছে এই বাঘ বেশ সাহসী! জিনাতের মতো একেবারেই লাজুক নয়। না হলে ভোর বেলায় জাতীয় সড়কে গাড়ির আওয়াজ, তীব্র হর্ন। সঙ্গে আলোর তীব্রতায় ওই রাস্তা পার করে! পাটা এলাকার বাসিন্দা ঠাকুর মাঝি নামে ওই কৃষক বলেন, ” রবিবার রাত পর্যন্ত ওই পায়ের ছাপ ছিল না। রাত আটটা পর্যন্ত জমিতে স্বল্প সেচের কাজ করছিলাম। এদিন সাতসকালে উঠে দেখি জমি জুড়ে ওই পায়ের ছাপ। সবাইকে দেখানোর পর বুঝতে পারি ওটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। ভাবলেই যেন কেঁপে যাচ্ছি। জমি থেকে যেদিকে পায়ের ছাপ মিলেছে তাতে ওই জন্তু দলমার দিকে গেলেও মনে প্রশ্ন জাগছে আবার ফিরে আসবে না তো? “

Advertisement
জিনাতের পুরুষসঙ্গী ধরা না দিয়ে সোমবার ভোরে দলমামুখী। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

 

নিশ্চিত হতে পারছে না যে বনদপ্তরও। দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের হাতির করিডর থেকে আবার এমুখো হবে না তো? আসলে এর স্বভাব, বৈশিষ্ট্য যে এখনও বুঝতেই পারেননি ঝাড়খণ্ড বনবিভাগের কর্তারা। জিনাতের মত শুধু সামনের দিকে যে এগোয়নি এই রয়্যাল। বালিডি জঙ্গল ঘিরে চড়কিপাক খেয়েছে। কখনও বালিডির পাহাড়ে ডেরা। আবার কখনও সেখান থেকে নেমে সুবর্ণরেখায় জল পান। আবার কখনও সুদূর তামাড় বনবিভাগে যাওয়া। সেখান থেকে আবার ফিরে এসে বালিডি পাহাড়ে ওঠা। তারপর পাহাড় নেমে সোমবার ভোর রাতে দলমার পথে হাঁটা। তবে আপাতদৃষ্টিতে ঝাড়খন্ড বনবিভাগ খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেও আশঙ্কা বাড়ছে পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের। ওই রয়্যাল তো আর সোজা যাচ্ছে না। যেন চড়কিপাক খাচ্ছে। দলমার ঘন জঙ্গলে যে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাবে এমন ভাবার উপায় নেই। দলমার বাঁ দিক ছেড়ে আবার সোজা হাঁটলে অর্থাৎ পূর্বে বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি। আবার ইউটার্ন নিলে উত্তর-পশ্চিমে লম্বা বন্যপ্রাণের করিডোরে সোজা অযোধ্যা পাহাড় ও পাহাড়তলি। দলমামুখী হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই পুরুলিয়া বনবিভাগেরও।

পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “আমরা একেবারে সতর্ক। ২৪ ঘন্টা শিফটিং ডিউটি চলছে। চলছে মনিটরিং। ” শুধু তাই নয় ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা বলরামপুর, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষের তথ্য আদান-প্রদানে সমন্বয়েও মজবুত করা হয়েছে। ঝাড়খন্ড বনবিভাগ সরকারিভাবে বাংলায় কোন বার্তা না পাঠালেও পুরুলিয়া বনবিভাগকে সুরক্ষিত রাখতে ঝাড়খন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। সঙ্গে কংসাবতী দক্ষিণও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement