অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়,শিলিগুড়ি: ভাঙা হল নকশাল আন্দোলনের প্রতীক লেনিনের মূর্তি। মঙ্গলবার দোলের রাতে এই ঘটনা ঘটে নকশালবাড়ি এলাকায়। এই ঘটনায় নকশালবাড়ির বেঙ্গাইজোত এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দার্জিলিং জেলা পুলিশ। এদিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই। ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছে সিপিআইএমএল লিবারেশনের জেলা সম্পাদক পবিত্রমোহন সিংহ।
১৯৬৭ সালের ২৫ মে প্রসাদুজোত ও বেঙ্গাইজোতের সংযোগস্থলে পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষকদের মিছিল হয়। ওই মিছিল থেকেই পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে দুজন শিশু-সহ ১১ জন প্রাণ হারান। ওই বছরই বেঙ্গাইজোত প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে শহীদ স্মারক ও মূর্তি স্থাপন করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে লেনিনের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়। স্থানীয়দের অনুমান, রাতে মদ্যপ অবস্থায় কিছু দুষ্কৃতী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
যদিও সিপিআইএমএল লিবারেশনের জেলার আহ্বায়ক অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “দক্ষিণপন্থী শাসক যারা রয়েছে তারা এই লেনিনের মুর্তিকেই টার্গেট করছে। ত্রিপুরায় যখন বিজেপি সরকার আসে তখন ওরা প্রথম যেটা টার্গেট করেছিল, সেটা হল লেলিনের মূর্তি। নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ির এই অঞ্চলে আরএসএসের প্রভাব রয়েছে। এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, এটার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও উদ্দেশ্য আছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের একটা স্মারক স্তম্ভ ওখানে আছে। তারা হয়তো চাইছে না মূর্তিগুলো ওখানে থাকুক। তাই পুলিশ-প্রশাসনকে দোষিদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।”
এদিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোও। এপ্রসঙ্গে মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা বিজেপি শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আনন্দময় বর্মন বলেন,”মূর্তি কে ভেঙেছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। তবে বিজেপি কারও দলীয় কার্যালয় বা মূর্তি ভাঙার মত কাজ করে না। তবে চাই পুলিশ-প্রশাসন দোষীদের খুঁজে বের করুক।” ঘটনাকে কেন্দ্র করে বামেদের দার্জিলিং জেলা কমিটির আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, “লেলিনের মুর্তি ভেঙে তার আদর্শকে ভাঙা যায় না। যারা মুর্তি ভাঙছে তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হচ্ছে। এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করছি , প্রশাসনের কাছে অনুরোধ যারা এই ঘটনা ঘটাল তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করার।” আবার দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, “মূর্তি ভাঙার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা সকল দলের মতাদর্শকে সম্মান করি। যারা এই কাজ করেছে তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করুক।” এই ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনোরঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.