ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কোভিড (Covid-19) থাবা বসিয়েছে, অথচ রোগী টের পাচ্ছেন না। কোনও উপসর্গ যে নেই! বাড়িতে পালস অক্সিমিটারও নেই যে আঙুলে লাগিয়ে অক্সিজেনের হাল বুঝবেন! পরিণাম যা হওয়ার তা-ই। অনেক সময় রোগীর যতক্ষণে অসুস্থতা মালুম হচ্ছে, ততক্ষণে ভাইরাস জাঁকিয়ে বসেছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর নাভিশ্বাস উঠছে, হাসপাতালে গিয়েও লাভ হচ্ছে না। বাড়িতে স্রেফ একটা অক্সিমিটার (Oximeter) থাকলে হয়তো আগে সচেতন হয়ে বিপর্যয় এড়ানো যেত। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামেই সমস্যাটা বেশি। এই প্রাণঘাতী সমস্যার সুরাহায় এবার কার্যত যুগান্তকারী পদক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকার। ঠিক হয়েছে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরই নিজের উদ্যোগে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পালস অক্সিমিটার পৌঁছে দেবে। প্রাপকরা তার সদ্ব্যবহার করলে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যায় অনেকটা রাশ টানা যাবে বলে কর্তারা আশাবাদী।
বস্তুতই কোভিডের আগ্রাসন এখন শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে গ্রামকে গিলছে। নিত্যদিন রাজ্যের প্রায় সব জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগীরা আসছেন। তাঁদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, কিন্তু রিপোর্ট পেতে অন্তত বাহাত্তর ঘন্টা। এই মাঝের সময়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা জানা অত্যন্ত জরুরি। জানা দরকার রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন। সেইমতো চিকিৎসা হলে সেরে ওঠা কঠিন নয়। এটা মাথায় রেখেই উদ্যোগটি দানা বেঁধেছে। প্রথম ধাপে রাজ্যের প্রায় ১০টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এর আওতায় আনা হবে। কাজে লাগানো হবে আশা এবং অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাহিদা অনুযায়ী পালস অক্সিমিটার মজুত থাকবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা অজয় চক্রবর্তীর কথায়,” কোভিড উপসর্গ রয়েছে কিন্তু টেস্ট রিপোর্ট আসেনি, এমন সব রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে কয়েক দিনের জন্য পালস অক্সিমিটার দেওয়া হবে। আশাকর্মীরা তাঁদের হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেবেন, কীভাবে অক্সিমিটারে আঙুল ঢুকিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা যায়। উপসর্গ কমলে বা রোগী হাসপাতালে ভরতি হলে যন্ত্রটি আশা বা অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের হাতে ফেরত দিতে হবে।” এই বিপুল সংখ্যক অক্সিমিটার কেনার জন্য শিগগিরই টেন্ডার ডাকা হবে। “সবটাই এখন হিসাব নিকাশের পর্যায়ে। তবে জুনের গোড়াতেই যাতে পাইলট প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়, তার তৎপরতা শুরু হয়েছে।” জানালেন এক কর্তা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরেই হুগলি, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। এই সব জেলায় প্রাথমিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ২০টি শয্যা কোভিড রোগীর জন্য বরাদ্দ। গ্রামীণ ডাক্তারদেরও তালিম দিয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নামানো হচ্ছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্য, “এর বাইরেও কিছু রোগী থাকতে পারেন, যাঁদের হাসপাতালে ভরতির দরকার নেই। অথবা রিপোর্ট আসেনি। ওঁদের জন্যই অক্সিমিটার।”
জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে আশাকর্মীরা ফের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা শুরু করেছেন। যাঁদের কোভিড উপসর্গ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা, তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা পাঠানো হচ্ছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। সেই তালিকা মিলিয়ে যেমন পালস অক্সিমিটার রোগীকে দেওয়া হবে, তেমনই ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্স মোতায়েন রাখা হবে, যাতে গুরুতর অসুস্থকে দ্রুত জেলার কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.