ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রতিদিন নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে সংক্রমিতের সংখ্যা। এমতাবস্থায় কলকাতার হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ কমাতে রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে কোভিড (COVID) চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। যে লক্ষ্যে এই সপ্তাহে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে প্রশাসন বৈঠকে বসবে বলে নবান্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
স্বাস্থ্য ভবনের খবর অনুযায়ী, সব জেলার সরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার যথাযথ পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাতে স্বাস্থ্য ভবনে তৈরি হচ্ছে আলাদা সেল। রাজ্য সরকার চাইছে, জেলার কোভিড রোগীর চিকিৎসা রোগীর বাড়ির কাছের হাসপাতালে হোক। তাতে সময়ে চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর পরিবার নিশ্চিন্তে থাকবে, পাশাপাশি কলকাতার উপর চাপ কমবে।
বস্তুত গত সপ্তাহে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য-অধিকর্তা-সহ অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। বৈঠক প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য না-করলেও স্বাস্থ্য-অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী বলেন, “দ্রুত চিকিৎসা করে রোগ উপশমের তাগিদে সব জেলা হাসপাতালের একটি অংশ করোনার জন্য বরাদ্দ করার পরিকল্পনা হয়েছে। তাতে যেমন কলকাতার হাসপাতালে চাপ কমবে, তেমন কোভিড সম্পর্কে অকারণ ভীতি বা সংশয়ে রাশ টানা যাবে।” একইভাবে সরকার চাইছে করোনা চিকিৎসায় আরও বেসরকারি হাসপাতাল এগিয়ে আসুক। তাতে শয্যাসংকটের সুরাহা হবে। রোগীরাও দ্রুত পরিষেবা পাবেন।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, প্রথম দফায় দুই চব্বিশ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরের জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো বাড়ানো হবে। হাসপাতালের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে করোনা চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ডা. অভিজিৎ চৌধুরির কথায়, “বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে আরও বেশি সংখ্যক আক্রান্তের দ্রুত চিকিৎসার স্বার্থে জেলা হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগী ভরতির ব্যবস্থা করতেই হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। তাতে দ্রুত চিকিৎসা হবে। কোভিড সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা কমবে।”
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই সপ্তাহে জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেখানেই নবান্নের বার্তা জানিয়ে দেওয়া হবে। সব হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা পরিষেবাও আনা হবে নজরদারির আওতায়। এ দিকে অভিযোগ আসছে, কোভিড আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যভবন থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে চালক বা সহকারী সাহায্য করেন না। সমস্যার দ্রুত সমাধানের উদ্দেশে স্বাস্থ্যভবনে আলাদা সেল তৈরি হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, রোগীর বাড়ির কাছের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যাতে চটজলদি অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়। জানা গিয়েছে, ক’জন নোডাল অফিসারের নেতৃত্বে কর্মীদের নিয়ে এই আলাদা সেল কাজ করবে। ফি সপ্তাহে সেলের কাজকর্ম পর্যালোচনা করা হবে। যে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুইয়ের প্রতিক্রিয়া, “চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে অ্যাম্বুল্যান্সের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা বাঞ্ছনীয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.