ক্ষীরোদদীপ্তি ভট্টাচার্য: পুরোদস্তুর কর্পোরেট স্টাইল৷
অবসরের দিনই পেনশন পাবেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসবে প্রভিডেন্ট ফান্ডের গচ্ছিত অর্থ৷ ই-পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে আগামী আর্থিক বছরের শুরুতেই এই পরিষেবা চালু করতে চলেছে রাজ্য৷ প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষকদের পাশাপাশি পঞ্চায়েত, পুরসভা, জেলা পরিষদ এবং ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন৷ নবান্ন সূত্রে খবর, অন্তত ৬ লক্ষ কর্মী পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন৷
ই-পেনশন প্রকল্প চালু করার জন্য নতুন পোর্টাল চালু করেছে অর্থ দফতর৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট সার্ভিসের আধিকারিকদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ নবান্নে অর্থ দফতরের প্রধান সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে৷ বস্তুত, প্রতিদিন নিয়ম করে কলকাতা-সহ সব জেলা থেকে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ট্রেজারিগুলির থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে নিয়ম করে৷ অর্থ দফতরের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “আগামী আর্থিক বছরের শুরুতেই এই প্রকল্প চালুর জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷ কাজ চলছে জোরকদমে৷”
অবসরের পর পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের গচ্ছিত অর্থ হাতে পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের৷ এক সময় পেনশনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মৃত্যুও হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এই অবস্থার তিনি অবসান চান৷ শিক্ষকরা পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ যাতে দ্রুত পেতে পারেন তার জন্য অর্থ দফতরকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ অর্থ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মূলত মুখ্যমন্ত্রীর নিদের্শেই এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷” তবে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা এই সুযোগ পেলেও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অন্যান্য সরকারি কর্মীরা এই সুযোগ এখনই পাচ্ছেন না৷ কারণ হিসাবে বিভাগীয় আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়টি দেখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস৷ কেন্দ্র এখনও এই ধরনের ‘পোর্টাল’ গড়ে তুলতে পারেনি৷ তাই সুবিধা অধরা থেকে যাবে অন্যান্য সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে৷” অর্থ দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, “রাজ্যে চালু হওয়া ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যাপক প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ পরপর দু’বছর দেশের সেরা হয়েছে রাজ্য অর্থ দফতর৷ এই ব্যবস্থায় ফাইল চালাচালির অবসান হয়েছে৷ কম্পিউটারে নির্দেশ যাচ্ছে৷” এখন দেখা যাক কীভাবে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে? দফতরের এক আধিকারিকের কথায় কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীঅবসরের এক বছর আগে তাঁর পেনশন সংক্রান্ত নথি সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিলেই তা কম্পিউটারের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে ডিরেক্টরেট অফ পেনশন প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যান্ড গ্রুপ ইনসিওরেন্সের কাছে দ্রুত পাঠিয়ে দেবে স্কুল শিক্ষা দফতর৷ অর্থ দফতরের ওই বিভাগে একপ্রস্থ পরীক্ষা করার পর সংশ্লিষ্ট ট্রেজারিতে যাবতীয় তথ্য জানানো হবে৷ এরপর অবসরের নির্দিষ্ট দিনে ওই ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রাপ্য অর্থ চলে যাবে৷ এতদিন এই প্রক্রিয়া কাগজ-পত্রে চলছিল৷ কিন্তু কয়েক মাস আগে গোটা বিষয়টি আইএফএমএস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলে এসেছে৷ এই প্রক্রিয়াটি অর্থ দফতরে ই-পিপিও নামে পরিচিত৷ প্রসঙ্গত, আইএফএমএস পদ্ধতি চালু করায় যেমন সময় বাঁচছে, তেমনই সরকারের কোষাগারে বছরে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.