নিজস্ব চিত্র।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গরিব ঘরের সন্তান। দীর্ঘ সংঘর্ষ করে পেয়েছিলেন পুলিশের চাকরি। তবে মনে প্রাণে চাইতেন ছাত্র পড়াবেন। ছেড়ে দেন পুলিশের ‘সুরক্ষিত’ চাকরি। লড়াই চালিয়ে পেয়েও যান সাধের শিক্ষকতার চাকরি। বাড়ির কাছেই একটা স্কুলে পড়াতেন। তবে একলহমায় সব কিছু পুড়ে ছাই। সোমবার হাই কোর্টের (Calcutta High Court) রায়ে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ২০১৬ এসএসসির গোটা প্যালেনটাই। বিনা মেঘে বজ্রাঘাতে মাথায় হাত নদিয়ার ‘যোগ্য’ শিক্ষকের।
নদিয়ার বাসিন্দা প্রবীর মজুমদার। এক দশকের বেশি সময় ধরে করেছেন পুলিশের চাকরি। মনের সুপ্ত বাসনা ছিল শিক্ষকতা করার। সেই থেকে কঠিন ডিউটির মাঝে সময় বার করে ফের শুরু করেন পড়াশোনা। সম্পূর্ণ করেন বিএডও (BD)। এরপর ২০১৬ সালে এসএসসির (SSC) পরীক্ষায় বসেন। পাশ করে ২০১৮ সালে যোগদেন নিজের পছন্দের চাকরিতে। বৃ্দ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সব কিছু ঠিকই চলছিল। ২৮২ পাতার রায়ে সেই সাজানো সংসারে বয়ে যাওয়া ‘ঝড়ের ক্ষতির চিহ্ন’ পরিষ্কার।
প্রবীর বলেন, “অনেকের কাছেই স্বপ্নের পেশা বলে কিছু থাকে। আমারও ছিল। পুলিশের চাকরি ছিল বটে। কিন্তু মনে মনে চাইতাম শিক্ষক হতে।” এর পর এক নিশ্বাসে বলে যান, “বুঝতেই পারছেন পুলিশের চাকরি কতটা পরিশ্রমের। বিভিন্ন শিফ্টের ডিউটি। সব কিছু সামলে পড়াশোনা করেছি। বন্ধুদের কাছ থেকে নোটস নিতাম। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে যাই।”
২০১৬-এর আগে ২০০৯ সালে ইন্টারভিউ পর্যন্ত গিয়েছিলেন প্রবীর। সেখানে বাদ চলে যান। এর পর ২০১৬ সালে ফের এসএসসি পরীক্ষায় বসেন। চাকরিও পান। ২০১৮ সালে রানাঘাটের (Ranaghat) একটি স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। ৬ বছর চাকরি করছেন সেখানেই। প্রবীরের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, দশ দিন আগে তাঁর স্ত্রীর একটি কঠিন অপারেশন হয়েছে, বাড়িতে আড়াই বছরের সন্তান। কথা বলতে গিয়ে গলা আটকে আসে তাঁর। ঢোক গিলে বলেন, “আজ স্ত্রীর পাশে থাকার সময় আমার, কিন্তু আজ আমি ধর্মতলায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.