সম্যক খান, মেদিনীপুর: মাফিয়া শ্রীনু নাইডু খুনের মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন অপরাধ জগতের আরেক বেতাজ বাদশাহ বি রামবাবু ও তার শাগরেদরা। শ্রীনু নাইডু-সহ দুজনের খুনের ঘটনায় রামবাবুকেই মূল মাস্টারমাইন্ড বলা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই মামলাতেই ধৃত সকলের বেকসুর খালাস হওয়া নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে।
২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি খড়্গপুরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভার দুপুরে খুন হন শ্রীনু নাইডু ও তাঁর সঙ্গী ধরমা রাও। পার্টি অফিসে ঢুকে গুলিতে দুজনকে ঝাঁজরা করে দেয় দুষ্কৃতীরা। ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার বেকসুর খালাস পেলেন রামবাবুরা। ওই মামলাতে ৫৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সরকারি আইনজীবী সমর নায়েক বলেছেন, “বেনিফিট অফ ডাউটে তাঁরা আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এই রায় অপ্রত্যাশিত ও পক্ষপাতদুষ্ট।” রায়ের কপি সংগ্রহ করে জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন শ্রীনু নাইডুর পরিবার।
রামবাবুদের আইনজীবী সুমন্ত দাস, দেবাশিস মাইতিরা বলেছেন, ওই মামলায় রামবাবু, কে শঙ্কর রাও-সহ ১৩ জন আসামী ছিলেন। তাঁদের সকলকেই এদিন সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহা। রায় শোনার পর আদালতের মধ্যে হাসিমুখে ছিলেন রামবাবু। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে আছেন। আদালত তাঁকে মঙ্গলবার বেকসুর খালাস করলেও আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ছাড়া পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁর আইনজীবীরা।
প্রথমে বিজেপির আশ্রয়ে ছিলেন শ্রীনু নাইডুরা। পরবর্তীকালে যোগ দেন তৃণমূলে। তাঁর স্ত্রী পুজা নাইডু এখন খড়গপুর পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর। নিজেদের ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়ে সেদিন শাগরেদদের নিয়ে বসেছিলেন শ্রীনু। তখনই দুপুরের দিকে অতর্কিতে হামলা হয়। ওই ঘটনায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুনের ঘটনার ৪৮ দিনের মাথায় সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশের তনুকু শহর থেকে রামবাবুকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের একটি দল।
অভিযোগ ছিল, খড়্গপুরে নতুন করে মাফিয়ারাজ তৈরি করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন জোগার করে খুন করানো হয়। অন্ধ্রপ্রদেশে বসেই প্রাথমিকভাবে শ্রীনু খুনের পরিকল্পনা করা হয়। টাটানগর, কলকাতা, শালিমার, খড়্গপুর থেকে শ্রীনু বিরোধীদের একজোট করে খুন করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৯ সালে মানস চৌবে এবং ২০০১ সালে গৌতম চৌবে খুনের ঘটনাতেও জেলে ঢুকেছিলেন রামবাবু। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তও হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকার পর ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের জামিনে জেলমুক্ত হয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.