দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: গোটা দেশজুড়ে পালিত হয়েছে রঙের উৎসব৷ একে অপরকে রাঙিয়ে দেওয়াই রীতি৷ বসন্তের শেষে যেন দু’দিন নিজেদের রাঙিয়ে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে উৎসবমুখররা৷ কিন্তু গোটা দেশ যখন শুধুমাত্র দোল উৎসবে মাতোয়ারা তখন শ্রীরামপুরের বাড়তি পাওনা দুর্গাপুজো৷ অবাক হলেও এটাই সত্যিই৷ দোলের আগের দিন থেকেই দুর্গাপুজো আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷
প্রায় দু’শো বছর আগে শ্রীরামপুরে দোলের দিন দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়৷ সেই সময় শ্রীরামপুরের জমিদার ছিলেন পুলিনবিহারী দে এবং নগেন্দ্রনাথ দে৷ তাঁদের আমলেই দুর্গাপুজো শুরু হয়৷ তারপর থেকে কেটে গিয়েছে দুই শতক৷ জমিদারি চলে গিয়েছে৷ জাঁকজমকও আর তেমন নেই৷ কিন্তু পুজোর চল আজও রয়েছে৷ জাঁকজমক কমলেও, ঐতিহ্যে আজও ছেদ পড়েনি এতটুকু৷ প্রতি বছর দোলের দিন পঞ্চাননতলায় দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়৷ বর্তমানে তা বারোয়ারি পুজোর রূপ নিয়েছে৷ এলাকার আট থেকে আশি সকলেই এই পুজোয় অংশ নেন৷ দোলের দিন আগের দিন ঠাকুর আনা থেকে শুরু করে পুজোর কেনাকাটি সবেতেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন সবাই৷ দোলের দিন দুর্গাপুজোর সপ্তমী৷ এখানে দেবী দুর্গা দশভূজা হিসাবেই পূজিতা হন৷ তবে সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে আসেন না তিনি৷ পরিবর্তে এখানে দেবীর সঙ্গে থাকেন তাঁর দুই সখী৷ জয়া এবং বিজয়া৷ চারদিন ধরেই নিষ্ঠাভরে চলে পূজার্চনা৷
বসন্তোৎসবের সময় তাই কার্যত উৎসবের চেহারা নেয় গোটা এলাকা৷ একে অপরকে আবির মাখিয়ে দুর্গাপুজোর সপ্তমীতে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী৷ অষ্টমী হয় হোলির দিন৷ ওইদিন কয়েক হাজার মানুষ এখানে অন্নভোগ গ্রহণ করেন৷ নবমীর পুজোর পর দশমীতে দেবীকে বিদায় দেওয়ার পালা৷ ওইদিন একেবারে বিপরীত ছবি দেখা যায় গোটা এলাকায়৷ মাকে বিদায়ের বিষাদ যেন আষ্টেপৃষ্টে গ্রাস করে সকলকে৷ চোখের জলে মাকে বিদায় দেন এলাকাবাসী৷ আবারও শুরু হয় প্রহর গোনা৷ কবে হবে দোল, কবে জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে আবারও এখানে আসবেন মা, সেই প্রতীক্ষাতেই গোটা বছর কাটে শ্রীরামপুরের বাসিন্দাদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.