গৌতম ব্রহ্ম: নাগা সন্ন্যাসীর ডেরায় বসেই আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করলেন এক তরুণী সন্ন্যাসিনী। বয়স কুড়ি বছরের আশপাশে। পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে বিশেষভাবে সক্ষম। স্বপ্ন একটাই, গেরুয়া পরেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ পরীক্ষার হার্ডলস টপকাবেন। সাধু সমাজের উন্নতিকল্পে কাজ করবেন।
রাজেশ্বরী ভারতী। আদতে মুম্বইয়ের বাসিন্দা হলেও উচ্চশিক্ষা হিমাচল প্রদেশে। কিন্তু, বছর দু’য়েক আগে এক পথ দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পান। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন তরুণী রাজেশ্বরী। দেখভাল করার কেউ ছিল না। এই সময় কন্যাসমা রাজেশ্বরীকে গঙ্গাসাগরে নিয়ে আসেন মহাদেব ভারতী। অশীতিপর হলেও টানটান চেহারা। তিন-চারজনের কাজ একাই করতে পারেন এই নাগা সন্ন্যাসী। রান্নার হাতও চমৎকার। দেশজুড়ে বহু শিষ্য, শিষ্যা রয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর লীলায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়া এই শিষ্যাটির উপর প্রবল মায়া পড়ে গিয়েছে মহাদেব ভারতীর। জানালেন, “দীর্ঘদিন রাজেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তারপর আমিই সেবাসুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলেছি। আপনারা ওঁর জন্য একটু প্রার্থনা করুন। যাতে ও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।”
দীর্ঘদিন কপিলমুনির মন্দিরের পাশে রয়েছেন মহাদেব ভারতী। রাজ্য সরকার কংক্রিটের ঘর বানিয়ে দিয়েছে নাগা সন্ন্যাসীদের জন্য। সেখানেই মহাদেব ভারতীর আখড়া। রাজেশ্বরী এখন সেখানেই থাকেন। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে সাগরদ্বীপে ভিড় বাড়ছে। স্নানের পাশাপাশি নাগা সাধুরাও এই মেলার মুখ্য আকর্ষণ। অনেকেই আশীর্বাদ নিচ্ছেন। সাধুরা তাঁদের কপালে ভস্মের টিকা পরিয়ে দিচ্ছেন। মহাদেব ভারতীর আখড়ায় গিয়ে দেখা গেল গায়ে ভস্ম মেখে প্রবল শীতেও বস্ত্রহীন হয়ে রয়েছেন তিনি। রাজেশ্বরী বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল ঘাঁটছেন। মহাদেবই আলাপ করিয়ে দিলেন তরুণী সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে। রাজেশ্বরী জানালেন, সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই দেশের জন্য কাজ করতে চান তিনি। দুর্ঘটনার পর বহুদিন ভেন্টিলেশনে কাটিয়ে এখন একটু সুস্থ। কিন্তু, কথাবার্তা জড়িয়ে যাচ্ছে। বারবার পিতৃতুল্য গুরুদেব মহাদেব ভারতীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন।
সত্যিই তো অশীতিপর গুরুদেবকে তো শিষ্যদের এখন সেবা করার কথা। উলটে শিষ্যাকেই পরম মমতায় সেবা করছেন গুরু। মহাদেব ভারতী জানালেন, “মেধাবী, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ওর। আইএএস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি কপিলমুনি ওর ইচ্ছেপূরণ করবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.