ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভাষা আন্দোলন থেকে অধিকার আদায়। সমাজ জীবনের সুখ-দুঃখ থেকে ভালো-মন্দ। জঙ্গলমহলের মানুষজনের, বিশেষ করে ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ার মানুষজনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে টুসু। আর সেই টুসু গানকেই এবার হাতিয়ার করা হলো ওড়িশার বাঘিনী জিনাত থেকে সতর্কতায়। কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের যৌথ বন পরিচালন কমিটির বিশেষভাবে সক্ষম সদস্য তিলক তন্তুবাইয়ের গলায় ওই টুসু গান এখন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে বাঘিনীর আতঙ্কের মধ্যেই ভাইরাল। সামাজিক মাধ্যম থেকে স্মার্টফোনের হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে, “বাঘ ঢুকেছে রাইকা পাহাড়ে, তোরা যাস নারে ভাই বন ধারে।”
তিলকের কথায়, “একজন যৌথ বন পরিচালন সমিতির সদস্য হয়ে বন্যপ্রাণ থেকে মানুষ জনকে সচেতন করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর সেই দায়িত্বর বিষয়টির মাধ্যম করেছি জনপ্রিয় টুসু গানকে।” ওই টুসু গানের কথায়-কথায়, লাইনে-লাইনে জিনাত থেকে সতর্ক ও সচেতনতার বার্তা। তিলক গাইছেন, “জংলী পথে যাস না রে ভাই…।” বনদপ্তরের কথা যৌথ বন পরিচালন সমিতির সদস্য যেভাবে টুসু গানে তুলে ধরলেন তাতে বাহবা জানাচ্ছেন বনদপ্তরের আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষজনও।
কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, “যৌথ বন পরিচালন সমিতির সদস্যকে কুর্নিশ জানাই। যে কাজ আমাদের করা দরকার সেই কাজ দায়িত্ব নিয়ে ওই পরিচালন সমিতির সদস্য করেছেন।” তার গানে রয়েছে বাঘের নজরদারিতে বন কর্মীদের অক্লান্ত দিন-রাত পরিশ্রমের কথা। এই বাঘিনী যে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর হয়ে বান্দোয়ানের জঙ্গলে ঢুকেছে সেকথাও গানে তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে গানে উঠে এসেছে সিমলিপালের ব্যাঘ্র প্রকল্পের কথা। ওখান থেকেই ঘরছাড়া হয়ে যায় সে। টুসুর সুরে ওই বাঘিনী সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য তুলে ধরায় বান্দোয়ান সহ জঙ্গলমহলের এই জেলার মানুষের কাছে সচেতনতামূলক বিষয় যেন সহজ হয়ে উঠেছে। মহিষ, ছাগল, শূকর টোপ দিয়েও যে বাঘিনী জিনাতকে বাগে আনা যায়নি, এই বিষয়টি সাধারণ মানুষ জনকে জানাতে ওই গানে রয়েছে। সেই সঙ্গে টুসুর গানে এই বাঘকে নিয়ে আতঙ্কের ছবি ফুটে উঠেছে। কেমন ভাবে এই জঙ্গলমহলে বাঘ ঢুকে গেল সেই দুঃখ গানে ফুটে ওঠে। এই বান্দোয়ান যে শাল- মহুল সবুজ পাহাড়ে ঘেরা সেটিও রয়েছে ওই গানে।
বিশেষভাবে সক্ষম যৌথ বন পরিচালন সমিতির এই সদস্য আদতে একজন লোকশিল্পী। লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় তার সেই পরিচয়পত্র না থাকলেও ছেলেবেলা থেকেই তিনি টুসু, ঝুমুর চর্চা করে আসছেন। তাছাড়া লেখালেখিও করেন তিনি। লেখেন কবিতা। বিশেষভাবে সক্ষম তিলক একেবারেই হাঁটাচলা করতে পারেন না। সবই পরিবারের সদস্যের উপর নির্ভরশীল। জামাকাপড় পরা থেকে সবকিছুই। পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, “সাবেক মানভূমের মানুষের মননে রয়েছে টুসু গান। ফলে টুসু গান দিয়ে কোন কিছু বোঝাতে চাইলে তা সহজেই বোধগম্য হয়ে ওঠে। যেমনটা হয়েছে তিলক তন্তুবাইয়ের টুসু গানে। ” সামনেই মকর, টুসু পরব। তাই এই গান এই সাবেক মানভূমের মানুষজনের মনে যেন গেঁথে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.