Advertisement
Advertisement
Jaynagar Moa

দশ আঙুলের জাদু, জয়নগরের বহড়ুতে ৪৫ মিনিটেই আড়াইশো মোয়া বানান মহিলারা

সম্প্রতি শহরের খ‌্যাতনামা এক চাইনিজ রেস্তরাঁ শীতের মরশুমে তাদের দোকানে জয়নগরের মোয়া রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।

Speciality about the Jaynagar moa

বহড়ুর মোয়া শিল্প। শীতের মরশুমে ব‌্যস্ততা। ছবি– অরিজিৎ সাহা

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:December 19, 2024 1:15 pm
  • Updated:December 19, 2024 1:22 pm  

কনকচূর খইয়ের সঙ্গে মেলে খেজুর গুড়। পাকে পাকে তৈরি হয় মহার্ঘ মোয়া। স্বাদে-গন্ধে তার নস্টালজিয়া এখনও বাঙালির হৃদয় ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে। এককথায় যাকে দুনিয়া চেনে ‘জয়নগরের মোয়া’ বলে। কোন রেসিপির জাদুতে আজও সেই আকর্ষণ অটুট, কেমন চলছে কারবার–খোঁজ নিলেন অভিরূপ দাস

যেখানে মোয়া সেখানে বাংলা। বিক্রেতারা বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুর দশ আঙুল ছাড়া মোয়া হয় না। স্রেফ কথার কথা নয়। কষ্টিপাথরে যাচাই করা সত্যি। আসানসোল, চন্দননগর, দক্ষিণ শহরতলির গড়িয়া তো বটেই। বাংলার বাইরে মুম্বই-দিল্লি-গুজরাতে জয়নগরের মোয়ার দোকান মানেই তাতে লেগে বহড়ুর হাতের ওম। মোয়া বানানোর গতি-কৌশল করায়ত্ত করা সম্ভব হয়নি অন‌্য কারও। বহড়ুর একেক জন মহিলা দিনে ১৬ থেকে ১৮ কেজি মোয়া পাকিয়ে দেন অনায়াসে। চোখ বুজে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আড়াইশো মোয়া পাকান।

Advertisement

সম্প্রতি শহরের খ‌্যাতনামা এক চাইনিজ রেস্তরাঁ শীতের মরশুমে তাদের দোকানে জয়নগরের মোয়া রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। মেনল‌্যান্ড চায়নার কর্ণধার হাজির হয়েছেন বহড়ুতে। শুধু কি তিনি? শ‌্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক রঞ্জিতকুমার ঘোষের দাবি, “আমাদের দোকান থেকে মোয়া সুইডেন পাঠিয়েছেন এমন লোকও আছে।” শেষ লোকসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিয়েতে মেনু হিসাবে রেখেছিলেন জয়নগরের মোয়া। বহড়ু থেকেই ঝুড়ি ঝুড়ি গুড়ে পাক দেওয়া ঘি-কিশমিশের খইয়ের গোল্লা গিয়েছে তাঁর বিয়েতে।

জয়নগরের মোয়ার এনসাইক্লোপিডিয়া বলা হয় ভবানী সরকারকে। পেশায় ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, চাকরি করতেন গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সে। বহড়ুর ভূমিপুত্র ভবানীবাবু আক্ষরিক অর্থে মোয়া গবেষক। জয়নগর তল্লাট তাঁর হাতের মুঠোয়। তাঁরই উদ্যোগে ছাপ্পান্নজন ব‌্যবসায়ী জয়নগরের মোয়ার জিআই শংসাপত্র পান। এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মিষ্টি উদ্যোগের অন‌্যতম কর্তা ভবানী সরকারের কথায়, ‘‘হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান করে জয়নগরের মোয়া। সে তালিকায় শুধু পুরুষ নেই, গৃহবধূরাও রয়েছেন।’’

ভবানীবাবুর বক্তব‌্য, ‘‘রানিগঞ্জ-আসানসোল তো বটেই, বাংলার বাইরেও জয়নগরের মোয়ার দোকান দেখলে এক মুহূর্ত দাঁড়ান। জিজ্ঞেস করুন, বাড়ি কোথায়? উত্তর পাবেন বাংলার জয়নগর। জয়নগরের কোথায়? এবার উত্তর আসবে বহড়ু-শ্রীপুর।’’ শীতের এই সময়টায় বাংলার নদিয়া-ডোমজুড়-বাকসাড়া-চন্দননগরে মাস তিনেকের জন‌্য একের পর এক দোকান খোলে। বাঙালির রসনাতৃপ্তি করাতেই সেসব এলাকায় ছুটে যান বহড়ুর কারিগররা। মোয়ার জন‌্য হিল্লি দিল্লি করেছেন তিনি। বলছেন, ‘‘শীতের এই সময়টায় হন্যে হয়ে মোয়া খোঁজে বাঙালি। তা বিলক্ষণ জানেন এখানকার কারিগররা। যেখানে বাঙালি সেখানে তাঁরা দোকান খুঁজে বেড়ান। অনেকে মাস তিনেকের জন‌্য দোকান ভাড়া নেন। স্রেফ জয়নগরের মোয়া বানিয়ে বিক্রি করবেন বলে।’’

বহড়ুতে স্থায়ী দোকান মেরেকেটে পঁচিশটা। মল্লভপুর, দাশপাড়া, নাইয়াপাড়ায় থাকেন এই ব‌্যবসায়ীরা। কিন্তু শীত এলেই সেই সংখ‌্যা তিনগুণ! ব‌্যবসায়ীদের ছেলেরা আলাদা আলাদা দোকান করেন। বহড়ুর কলুর মোড়ে মহাদেব দাসের দোকান যেমন। তাঁর ছেলে গণেশ দাশ বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে বসলেও গণেশ দাশের ভাই খুলেছেন নিউ বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। আসলে জয়নগরের মোয়ার চাহিদা প্রচুর। একা গণেশ দাশের দোকান থেকেই শীতের এই সময়টায় ফি-দিন ১৬ হাজার পিস মোয়া বিক্রি হয়। বহড়ুর কারিগররা বলছেন, যতই নাম হোক জয়নগরের মোয়া। আসলে হাত তো বহড়ু-র। কলুর মোড়ের বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের গণেশ দাশের কথায়, সে সময় বহড়ু ছিল ধ‌্যাড়ধেড়ে গ্রাম। হাট বসত জয়নগরে। সে হাটে মোয়া বিক্রি হত বলেই মুখে মুখে হয়ে গেল জয়নগরের মোয়া।

                                                                                                                                            আজ দ্বিতীয় পর্ব

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement