Advertisement
Advertisement
Purulia

কথা রাখলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার, ‘বিচ্ছিন্ন’ বড়গোড়ায় সড়ক সংযোগ

জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে হবে রাস্তা তৈরির কাজ, জানিয়েছেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক।

SP of Purulia keeps words, road will be constructed in rural area Bargora

'বিচ্ছিন্ন' বড়গোড়া পরিদর্শনে পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রতিবেদক।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 29, 2024 2:57 pm
  • Updated:December 29, 2024 4:22 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পরিদর্শন করেছিলেন জেলা পুলিশ সুপার। আর তাতেই মুশকিল আসান। রাস্তা পাচ্ছে পুরুলিয়া জেলার ‘বিচ্ছিন্ন’ বড়গোড়া। গত ১১ ডিসেম্বর পাহাড়ি পথে মোটরবাইকে চেপে পুলিশের কর্তা-সহ পুলিশ কর্মীদের নিয়ে তিনি অযোধ্যা পাহাড়ের ২০০০ ফুট উঁচু ওই গ্রামে পা রেখেছিলেন। কারণ, পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ‘আস্থা’ প্রকল্পে বারবার রাস্তার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন ওই গাঁয়ের পাহাড়িয়া জনজাতির মানুষজন। সেই কথা মাথায় রেখেই পুলিশ সুপার ওই পাহাড় চূড়ার গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রস্তাব বিডিও-র মধ্য দিয়ে জেলাশাসকের কাছে পৌঁছয়। এরপরই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ওই কাজ হবে।

গ্রামের মানুষজন পুলিশ সুপারের কাছে মোট চারটি রাস্তার প্রস্তাব রাখেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হল বড়গোড়া থেকে আমকোচা। আমকোচা থেকে ছাতরাজেরা। আমকোচা থেকে তিলাগোড়া। তিলাগোড়া থেকে খুনটাড়। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ যা ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে জেলা পরিষদ ছাড়াও ব্লক থেকেও ওই প্রকল্প ধরা হবে। মূলত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) রানা বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ সুপার কয়েকটি রাস্তার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। জেলা পরিষদের পাশাপাশি ব্লক স্তরেও প্রকল্প নেওয়া হবে। সবটাই প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”

Advertisement

নতুন রাস্তা পাবেন, একথা শোনার পর থেকে খুশি যেন আর বাঁধ মানছে না বড়গোড়ার পাহাড়িয়া জনজাতির মানুষজনের। ওই দিন বড়গোড়া গ্রাম ঘুরে পুলিশ সুপার সেখানকার মানুষজনদের আশ্বাস দিয়েছিলেন রাস্তা হবে। তিনি কথা রাখায় ওই পাহাড়চূড়া গ্রামের মানুষজন একেবারে উচ্ছ্বসিত। শুক্রবার অযোধ্যা হিলটপের রাঙাতে জেলা পুলিশের ‘আস্থা’ প্রকল্পের আওতায় শিবিরে এই খুশির খবর তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, “উন্নয়নের কাজে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স।” অর্থাৎ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পুলিশ। এসপি আরও বলেন, “আমি বড়গোড়া থেকে ফিরে আসার পর সেখানকার রাস্তার বিষয়ে জেলাশাসককে বলেছিলাম। প্রস্তাবিত রাস্তাগুলির বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। ধন্যবাদ জানাই জেলাশাসক-সহ সাধারণ প্রশাসনকে। আর ওই গ্রাম বিচ্ছিন্ন থাকবে না।”

অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে যাতে আর কোনওরকম অশান্তি না হয়, সেই লক্ষ্যে সাধারণ প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে। রাজ্যে পালাবদলের পর সেখানকার আদিবাসী মানুষজনের সঙ্গে যে জনসংযোগের ভিত মজবুত হয়েছে তাকে আরও সুদৃঢ় করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ২০২১ সালের শেষ থেকে ২০২২ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত মূলত জমির সমস্যায় পাহাড়ে সামান্য ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই। বরং ২০২২ সালের শেষ থেকে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ করে ‘আস্থা’ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এই পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করেছে। আসলে এই পাহাড়ের প্রত্যেকটি কোনায় যাতে সমস্ত সরকারি সুবিধা মেলে তার জন্য ২০২২ সালের সেই শেষ থেকেই রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ড, যাঁরা একসময় অতি বামপন্থা বা মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা ধারাবাহিকভাবে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সমস্যা তালিকাভুক্ত করে পুলিশ সুপারের কাছে জানান। এই স্পেশাল হোমগার্ডরা পুলিশ সুপারের কার্যত ‘থার্ড আই’ হিসাবে কাজ করছেন।

বড়গোড়া গ্রাম ঘুরে পুলিশ সুপার সেখানকার মানুষজনদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাস্তা হবে। ছবি: প্রতিবেদক।

আর সেই শনিবার অযোধ্যা হিল টপের রাঙার ‘আস্থা’ প্রকল্পের শিবিরে প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি মানুষ সরকারি পরিষেবা নেন। প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিতে রীতিমতো বাসে করে তাদের শিবিরে নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে আবার নিজের গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। বড়গোড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেত্রী সুমিত্রা পাহাড়িয়া বলেন, “বড়গোড়া থেকে আমকোচা রাস্তার জন্য আমি যে কতবার বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসনের কাছে গিয়েছি তার হিসাব নেই। কিছুদিন আগে ব্লক প্রশাসন প্রকল্প হাতে নিয়েও ওই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করেনি। যে ঢালাই রাস্তা করেছিল তা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে এতটাই নিম্নমানের কাজ হয়। তবে এসপি কথা রেখেছেন। আমি পুলিশের খাটিয়া বৈঠকে গিয়ে এই কথা বলেছিলাম। তারপর এসপিও গ্রামে আসেন। রাস্তা হলে আর বিচ্ছিন্ন থাকবে না বড়গোড়া।” ওই গ্রামের বাসিন্দা নাগর পাহাড়িয়া, হারাধন পাহাড়িয়া বলেন, “এবার আর উন্নয়ন থেমে থাকবে না আমাদের গ্রামে। রাস্তা হলে স্থায়ীভাবে পানীয় জলেরও সমাধান হবে।”

আর গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে ‘দাঁড়ি’ (মাটি খুঁড়ে) থেকে জল আনতে হবে না। ডুলি করে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে না। এই অনুন্নয়ন ও অসন্তোষকে ঘিরেই বাম আমলে অতিবামপন্থা আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল এই পাহাড়ে। এখন অবশ্য সেই ছবি সম্পূর্ণ অতীত। পুলিশ এখন পাহাড়ের মানুষের বন্ধু। তাই রাঙাতে ‘আস্থা’ প্রকল্পে শুক্রবারের শিবিরে পুলিশ সুপারকে তাদের ঐতিহ্য মেনে বরণ করেন। একইভাবে পুলিশও ওই শিবিরের মঞ্চে আদিবাসী জনজাতির সংস্কৃতি মেনে মাঝি বাবাদের সংবর্ধনা জানান। যা মন ছুঁয়ে যায় পাহাড়ের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement