সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একেবারে পাহাড়ের মাথায় ২২২০ ফুট উচুঁতে বাঘমুন্ডির জিলিং সেরেঞ। রেশন আনতে এই কাঠফাটা রোদে পাহাড়ি পথে নামতে হয় প্রায় তিন কিমি। অন্যদিকে কোটশিলার মুরগুমা থেকে পাঁচটা পাহাড় ডিঙিয়ে তবে লেওয়া গ্রাম। পাকা কেন্দ আর কুলের আঁটি চিবিয়ে দুপুর কাটছে সেখানকার বাসিন্দাদের। দু’বেলা ধোঁওয়া ওঠা থালা ভরতি ভাত তাদের কাছে ছিল বিলাসিতা! করোনা ‘রাক্ষস’-র আতঙ্কে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে আড়শা বনাঞ্চলের ভুদাও। তাই পাহাড়ি পথ ভেঙে রেশনও আনতে যাচ্ছে না এই জনপদ। অথচ প্রায় দশ কিমি হেঁটে রোজ কাঠ বেচতে সিরকাবাদ, কান্টাডি যেত এই গ্রামের বাসিন্দারাই। ফলে কোনও ক্রমে একবেলা ভাত ফুটিয়ে বাকি সময় জঙ্গলের শাক আর বাঁওলা খেয়ে দিন গুজরান।
অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাঁচ থানার প্রায় শতাধিক গ্রাম লকডাউনের জেরে যেন ব্লক সদর থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। হাতে টাকাকড়ি কিছুই নেই। এক সপ্তাহ ধরে উপার্জন বন্ধ। বনমহল অযোধ্যায় দিনমজুরি করা মানুষজনের যদি রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই পাহাড়ি জনপদের কি অবস্থা হয় তা ভুলে যাননি বারাসতের পুলিশ সুপার। ভোলেননি ওই এলাকার আধপেটা খাওয়া মানুষগুলোর মুখগুলো। তাই এই করোনার আবহে অযোধ্যা পাহাড়ে দশ হাজার কিলো চাল পাঠিয়ে দিয়েছেনতিনি।
বারাসাতের পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর হাত ধরে মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়া পার্থ-সৌমজিতের হত্যার কিনারা হয়। গ্রেপ্তার হয় বিক্রম। বলা যায়, অযোধ্যা স্কোয়াড শেষ হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তখন তিনি ডিএসপি (আইন–শৃঙ্খলা), পুরুলিয়া। সময় পেরিয়েছে। এখন তিনি বারাসতে, তবে সেখানে বসেই ভেবেছেন পুরুলিয়াবাসীর কথা। তাঁর পাঠানো দশ হাজার কিলো চালে এখন যেন দু’বেলা থালা ভরতি ভাত পাচ্ছে অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জের জিরিং সেরেঞ, লেওয়া, মামুডি, বামনি, ঘাটিয়ালির মত দুর্গম গ্রাম। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে দশ কেজি করে চাল পৌঁছে যাচ্ছে পাহাড়ের ঘরে ঘরে। সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সতর্কতায় প্রচারপত্র। ঘরে ঘরে চাল বিলিতে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গী হচ্ছে পুলিশও।
ওই সংস্থার সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “এই লকডাউনে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলির অবস্থা দেখে ফেসবুকে আবেদন করেছিলাম। তারপরই গত রবিবার বারাসতের এসপির দশ হাজার কিলো চালের গাড়িটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।” আর এই প্যাকেট ভরতি চাল পেয়ে যে কী খুশি সোমবারি সিং মুড়া, কাজলী হাঁসদা, ছুটু সিং মুড়ারা! কিন্তু এত চাল কীভাবে জোগাড় হল? বারাসত এসপির কথায়, “তখন মাও দমনে এই পাহাড়ি গ্রামগুলির মানুষে়র ঋণ কোনভাবেই শোধ করতে পারব না। তাই এই অবস্থায় সামান্য প্রয়াস আর কী! তবে এই চাল জোগাড় করতে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারাই আসল নায়ক।”
ছবি: অমিত সিংদেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.