রাজা দাস, বালুরঘাট: মণ্ডপসজ্জার সুক্ষ্ম হাতের কাজে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কদর বাড়ছে মহিলাদের। ধৈর্য্য এবং শিল্পের নিপুণতার জন্য জেলার নাম করা ডেকরেটরগুলি মেয়েদেরকেই নিয়োজিত করছে মণ্ডপসজ্জার নকশা তৈরির কাজে। এদিকে ঘরে বসে এইভাবে স্বাবলম্বী হতে পেরে উৎসাহ মেয়েদের মধ্যে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নামকরা ডেকরেটরগুলি তাদের প্যান্ডেলের নকশা তৈরির কাজে মেয়েদের নিয়োজিত করছে। কেননা, সুক্ষ্ম হাতের কাজে ধৈর্য্যর পাশাপাশি দরকার শৈল্পিক নিপুণতা। সেখানে ছেলেদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে মেয়েরাই। বছর কয়েক ধরে ডেকরেটরগুলির নয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বনির্ভর হচ্ছে মেয়েরা। জেলার সদর বালুরঘাটে থাকা নামকরা ভাই ডেকরেটরের ওয়ার্কশপে গেলেই মহিলা শিল্পীদের শৈল্পিক নিপুণতা চোখে পড়ে। পুজোর সময় সেখানকার একটি এমন ওয়ার্কশপে অন্তত দেড়শো গৃহবধূ ও মেয়েরাই নিয়োজিত। কোনও অভিজ্ঞ বা প্রধান শিল্পীর নির্দেশনায় হাতের সুক্ষ্ম কাজ মেয়েরা করে চলেছেন চরম ধৈর্য্য নিয়ে। থার্মোকল, রঙিন পেপার, ভেলভেট কাপড়, হরেক রঙের কাগজ, আঠা, চুমকি ইত্যাদির ব্যবহারে চলছে পাখি, গাছ, ফুল, পাতা বা অন্য ধরনের নকশা তৈরির কাজ। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা অবধি কাজের মাঝে ঘণ্টা খানেকের বিরতি পান মহিলা শিল্পীরা। যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদের পারিশ্রমিক দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ঘরে বসে ধীর স্থির এমন কাজে উৎসাহ শিল্পীদের।
কর্মরত মহিলা শিল্পী সপ্তমী দাস, মমতা দাস বলেন, এখানে থেকেই তাঁরা হাতের কাজ শিখেছেন। পুজোর সময় আড়াই মাস ধরে তারা চরম ব্যস্ততায় থাকেন। কেননা এই ক’মাসের উপার্জিত অর্থে পুজোর দিনগুলি তাদের কাছে আনন্দমুখর হয়। ছেলেমেয়ে বা পরিবারের পাশে এই সময় বাড়তি অর্থ নিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারেন তারা। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরা এই কাজ করে আসছেন। প্রয়োজন এখন নিজের বাড়িতেই নানারকম হাতের কাজ করতে পারবেন। পাশাপাশি, এমন নকশা তৈরির কাজে যুক্ত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সপ্তমী সিং বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এই কাজ করেন বিগত কয়েক বছর ধরে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এখন এই কাজকেই তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
[বৈষ্ণবমতে পুজো হলেও মায়ের পাতে রুই-কাতলা! কোথায় জানেন?]
অন্যদিকে, ডেকরেটর ভাই-এর কর্ণধার রাজ নারায়ণ সাহা চৌধুরি বলেন, ঘরে বসে নকশা তৈরির কাজে ধৈর্য্য বিশেষ প্রয়োজন। যা মেয়েদের অনেকটা বেশি ছেলেদের চেয়ে। এছাড়া সুক্ষ্ম কাজগুলি তাঁরাই ভাল করেন। পাশাপাশি, ছেলেরা সবধরনের কাজ করতে পারলেও মহিলাদের দ্বারা তা সম্ভব হয় না। মহিলাদের স্বাবলম্বী করার ভাবনাও ছিল তাঁর মধ্যে। সব দিকে বিবেচনা করে তিনি মহিলাদের প্রাধান্য দেন নকশা তৈরির কাজে। সারাবছর তার কাছেই অন্তত কুড়ি জন মেয়ে এই কাজ করেন। পুজোর মরশুমে অন্তত দেড়শো জনকে তিনি কাজের সুযোগ করে দিতে পারেন। এবারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ মিলিয়ে তিনটি বড় কাজ করছেন দুর্গামণ্ডপ। প্রতিবার এই ধরনের কাজে তাঁর প্রচুর শিল্পীর প্রয়োজন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.