রাজা দাস, বালুরঘাট: স্কুলে মিড ডে মিল খাওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের। শিক্ষকদের গাফিলতিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগ। প্রতিবাদে স্কুলের সামনে আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ অভিভাবকদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্কুলে যায় পুলিশও। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির কচড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ব্যাপক উত্তেজনা। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মৃত ছাত্রের নাম অভিজিৎ সরকার। বুধবার কুশমন্ডি কচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চলছিল। সেই লাইনে দাঁড়িয়েছিল বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অভিজিৎ সরকার(১২)। লাইনেই সে অসুস্থ বোধ করে। যা নজরে আসতেই বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা অসুস্থ অভিজিৎকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে নিয়ে যায়। তারা অসুস্থ ছাত্রটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলে। অভিযোগ, যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসুস্থ ছাত্রটিকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তার অভিভাবককে বিদ্যালয়ে ডেকে পাঠান। তাতেই কিছুটা সময় নষ্ট হয়। তার মধ্যে কিছু সময় কেটে যায়। অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে পৌঁছেই অসুস্থ অভিজিৎকে নিয়ে পাশের ইটাহার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্ত পথেই মৃত্যু হয় অভিজিতের। হাসপাতালে পৌঁছতেই অভিজিৎকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে, এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে পড়ুয়া থেকে স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের দরজা ভেঙে উত্তেজিত স্থানীয় বাসিন্দারা ভিতরে প্রবেশ এবং প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের জানালা, দরজা, পাখা-সহ বহু আসবাবপত্র ভেঙে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের সামনে রাজ্য সড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। দেহাবন্দ-ফতেপুর রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। খবর পেয়েই গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কুশমণ্ডি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তেজনা রয়েছে।
ওই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া শুভঙ্কর সরকার জানায়, তারাই অসুস্থ ছাত্রটিকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়েছিল। কিন্ত প্রধান শিক্ষক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেননি। তারাই অসুস্থ ছাত্রর চোখে, মুখে জল এবং পায়ে তেল মালিশ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ দাস বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক নেশাগ্রস্ত থাকেন। স্কুলের প্রতি নজর নেই। কর্তৃপক্ষ সময়মতো অসুস্থ ছাত্রটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। অন্য ছাত্র আর অবিভাবকরা শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্ত শেষরক্ষা হয়নি। প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাইছি।” তবে প্রধানশিক্ষক রানা বসাক বলেন, “দেরি না করেই বাড়িতে খবর দিয়েছিলাম। তার পরেও শারীরিক হেনস্তা করা হয়। ল্যাপটপ ও সোনার চেন খোয়া গিয়েছে। স্কুলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.