টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: রং বদলেছে বহুবার। কিন্তু ক্ষুরধার বুদ্ধি আর কাজের প্রতি একনিষ্ঠ মনোভাবে যে শিবিরেই গিয়েছেন, সাফল্য তাঁর বাঁধাধরা থেকেছে। কলেজ জীবন শেষ করে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সেখানে যুব সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব সামলাছেন। পরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের গড়ে পা রাখলে, সেখানেও যুব সভাপতির মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। এবার তিনি গেরুয়া শিবিরের হয়ে বঙ্গের যুব সংগঠনের দায়িত্ব সামলাবেন। এই তিন সাফল্যের জোরে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হিসেবে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেললেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ – ব্যতিক্রমী ও বিতর্কিত চরিত্র।
সৌমিত্র খাঁ। বয়স ৪১ বছর। বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাঁটি দুর্লভপুরের বাসিন্দা। অন্তত ছটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন ছোটবেলার বন্ধুদের প্রিয় ‘বাপ্পা’। সানগ্লাস থেকে উত্তরীয়, কুর্তা থেকে নাগরাই – আপাদমস্তক কেতাদুরস্ত, বলিয়েকইয়ে সৌমিত্র খাঁ রাজনীতির জগতে পা রেখেই জাত চিনিয়েছিলেন। পাঁচমুড়া কলেজ ছাড়ার পরে যোগ দেন জাতীয় কংগ্রেসে। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুব কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদকের পদ সামলেছেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময় কংগ্রেসের টিকিটে তিনি কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে বিধায়ক হন।
২০১১-এ রাজ্যের ক্ষমতায় আসা তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৪ সালে সৌমিত্রর মতো তরুণ নেতাকে পাশে পেতে চান শাসকদলের তৎকালীন সেকেন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায়। মুকুলবাবুর হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দেন সৌমিত্র খাঁ। দলে যোগ দেওয়ার পর রত্ন চিনে নিতে ভুল করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছরই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়াইয়ে সৌমিত্র খাঁ-কে এগিয়ে দেয় তৃণমূল। দলনেত্রী ভরসার যথাযথ মূল্য দিয়ে বিষ্ণুপুর থেকে জয়ী হয়ে তিনি দেশের সংসদ ভবনে পা রাখেন। এই সাফল্যের পর রাজ্যের প্রথম সারির অনেক নেতাকে পিছনে ফেলে ২০১৫ সালে দলের যুব সংগঠনের পদে বসানো হয়। এখানে মাত্র কয়েক বছরেই তাঁর জনপ্রিয়তা চরমে ওঠে।
এরপর ফের দলবদলের পালা। রাজ্যে সৌমিত্র খাঁ’র জনপ্রিয়তা দেখে তাঁকে নিজেদের শিবিরে টেনে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে দেশের শাসকদল বিজেপি। পদ্মশিবিরকেও নিরাশ করেননি বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র। জয়ী হয়ে তিনি পুনরায় বিষ্ণুপুরের সাংসদ নির্বাচিত হন। মাঝে বিস্তর বিতর্কে জড়িয়েছেন। একটা সময়ে নিজের সংসদীয় এলাকা বিষ্ণুপুরে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁর পুলিশি বাধা ছিল। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে সেসব কাটিয়ে একেবারে ক্লিন ইমেজেই ভোটযুদ্ধ জয় করেছেন সৌমিত্র খাঁ। বছর ঘুরতেই এবার তাঁকে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালো পদ্মফুল শিবির। সোমবার বঙ্গ বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটির তালিকা প্রকাশিত হলে দেখা যায়, যুব মোর্চার সভাপতির দায়িত্বটা বিষ্ণুপুরের সাংসদের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন অমিত শাহরা। আসলে ২০১৯ সালের লোকসভার ভোট বৈতরণী পেরনোর পর থেকে এ রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের বিস্তারের ক্ষেত্রে তরুণ নেতার সম্ভাব্য ভূমিকা কেমন হতে পারে, তা টের পেয়েছিলেন বিজেপির মত সর্বভারতীয় দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
মাত্র কয়েক বছরে রাজনীতির ময়দানে তাঁর এই ঈর্ষণীয় উত্থান কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অবশ্য বিজেপি রাজ্য সভাপতিকেই ‘গডফাদার’ মানছেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁর কথায়, ”দিলীপদার আশীর্বাদ পেয়েছি। তাই দল আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমার উদ্দেশ্য, রাজ্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারতন্ত্র উপরে ফেলা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.