Advertisement
Advertisement

Breaking News

আট মাস মায়ের দেহ আগলে রাখল দুই ভাই

রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার হরিণঘাটায়৷

Sons kept dead mother’s body for eight months
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 12, 2016 9:06 am
  • Updated:September 12, 2016 9:06 am  

স্টাফ রিপোর্টার, কৃষ্ণনগর: এবার রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া হরিণঘাটায়৷ মধ্য কলকাতায় দিদির মৃতদেহ ঘরে রেখে নিশ্চিন্তে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছিলেন ভাই৷ আর নদিয়ার ওই শহরে মায়ের মৃতদেহ প্রায় আট মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন দুই ছেলে৷

মা চলে গিয়েছেন গত শীতে৷ তারপর থেকেই তক্তপোশের উপর মায়ের মৃতদেহে কম্বল চাপা দেওয়া ছিল৷ যে ঘরে ছিল দেহটি, তার পাশের ঘরে থাকত দুই ছেলে৷ কখনও কেরোসিন ছিটিয়ে, আবার কখনও ডেটল ছিটিয়ে দুর্গন্ধ চেপে রাখত তারা৷ প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হত না৷ কেউ জিজ্ঞাসা করলে ছেলেরা বলত, “মা অসুস্থ৷ বিছানায় শয্যাশায়ী৷” কেমন আছে? ছেলেদের গতে বাঁধা জবাব ছিল, “ভালই আছেন৷” হয়তো এইভাবে কেটে যেত আরও অনেক দিনই, যদি না এলাকার কিছু ছেলে জোর করে ঢুকে পড়ত ঘরে৷ তাঁরাই দেখেন, ঘরের তক্তপোশে রয়েছে মৃতদেহটি৷ ইতিমধ্যেই যা কঙ্কালে পরিণত৷ ঘরের কোণে পড়ে আছে দু-একটি মাটির প্রদীপ৷ রয়েছে থালা-গ্লাসও৷

Advertisement

মৃতার নাম ননীবালা সাহা৷ বয়স প্রায় নব্বই৷ বিধবা মহিলা হরিণঘাটার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিমহাটে দুই ছেলের সঙ্গে থাকতেন৷ বড় ছেলে অরুণের বয়স প্রায় ৬০, ছোট অজিত প্রায় ৫০৷ দু’জনই অবিবাহিত৷ একটা সময় অজিত কাজ করতেন মুদি দোকানে, বিএসসি পাস অরুণ গৃহশিক্ষকতা করতেন৷ তবে সম্প্রতি দু’জন কোনও কাজ করতেন না, প্রায় গৃহবন্দি থাকতেন৷ বাড়িতে মাত্র দু’টি ঘরের একটিতে মা, অন্যটিতে দুই ভাই৷ টালির চালের সামনে বড় বারান্দা৷ তারই এক কোণে বৃদ্ধা একসময় রান্নাবান্না করতেন৷

প্রতিবেশীরা জানান, “প্রায় বছর দেড়েক ধরে বৃদ্ধাকে আর বাইরে দেখা যেত না৷ জিজ্ঞাসা করলেই ওরা বলত, মা অসুস্থ৷ তবে গত কয়েক মাস মহিলার কোনও সাড়াশব্দও তো পাচ্ছিলাম না৷”  ঘটনাস্থলে আসেন হরিণঘাটা পুরসভার চেয়ারম্যান রাজীব দালাল৷ তিনিই পুলিশকে খবর দেন৷ জড়ো হওয়া লোকজন মৃতার দুই ছেলেকে ঘিরে ধরেন৷ যদিও সবার সামনে তাঁরা তখনও নির্বিকার৷ চেয়ারম্যান রাজীববাবু জানান, “দুইজনেই সম্ভবত মানসিক ভারসাম্যহীন৷ ওঁরা কারও সঙ্গে মিশতেন না৷ বাড়িতে কাউকে ঢুকতেও দিতেন না৷ মানসিক ভারসাম্য হারিয়েই হয়তো মৃতদেহ ঘরে রেখে দিয়েছিলেন৷”

যদিও ঠিক কী কারণে মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখলেন দুই ছেলে? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব রবিবার বিকেল অবধি খুঁজে পায়নি হরিণঘাটা থানার পুলিশও৷ পুলিশের জিজ্ঞাসায় কারণ হিসাবে অরুণ সাহা বলেছেন, “তখন তো শীতকাল ছিল৷ ভাবলাম থাক কিছু হবে না৷ সেই থেকে রয়েই গিয়েছে৷ বডি ঘরেই ছিল৷ তিনদিন পরে দেখলাম পোকা ধরে গিয়েছে৷ আমি নিজেও অসুস্থ৷ ভাই সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছে৷ তাই দেহ পোড়াতে পারিনি৷”

দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হরিণঘাটা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ৷ ভাতও খেতে দেওয়া হয়৷ দুজনেই জানায়, “একবছর পর ভাত খেলাম৷” পুলিশ জেনেছে, বহুদিন ঘরেই দুই ভাই মুড়ি, চানাচুর খেয়েই দিন কাটাচ্ছিলেন৷ তবে ঘরের টেবিলে খাবারের কিছু পাত্র পাওয়া গিয়েছে৷ তাঁদের সবার ধারণা, মাঝেমধ্যে হয়তো তাঁরা বাইরের খাবার কিনে আনতেন৷ তবে পুলিশ ও এলাকার লোকজনের ধারণা, মৃতার দুই ছেলেই এখন মানসিক ভারসাম্যহীন৷ ঠিকমতো তাঁরা খেতেনও না৷ ফলে চেহারা এখন শীর্ণকায়৷

অথচ প্রায় সাত বিঘা জমি রয়েছে অরুণ সাহাদের৷ বাড়িতে রয়েছে একটি বড় পুকুরও৷ রয়েছে প্রচুর গাছপালাও৷ কিন্তু দু’জনের কেউই কোনও কাজকর্ম করতেন না৷ তাই ঘরের উপরে ছাদ থাকলেও জীর্ণ দশা তার৷ সারাই আর করা হয়নি৷ দেওয়ালেও গজিয়ে উঠেছে গাছ৷ প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গিয়েছেন অরুণ সাহাদের বাবা৷ উনি একটি ওষুধ কারখানায় কাজ করতেন৷ এরপর থেকে সম্ভবত জমানো টাকার সম্বল কমে এসেছিল৷ দুই ভাই এখন কাজও করতেন না৷ তাই মায়ের মৃতদেহ সৎকারের খরচ করাটাও তাদের অসাধ্যই ছিল বলে অনেকের ধারণা৷ তবে মানসিক ভারসাম্যহীনতার জন্যই যে তাঁরা মৃতদেহ আগলে ছিলেন, তা একপ্রকার স্পষ্ট৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement