কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: ছেলের মৃতদেহ মর্গে রেখে ভোট দিলেন মা। ছেলের মৃত্যু হার মানল মায়ের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার কাছে। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে বহরমপুর ব্লকের চালতিয়া শ্রীগুরু পাঠশালার হাইস্কুলে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে হতভাগী মা ছেলের আত্মার শান্তি কামনা করেন। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ছেলেকে হারিয়েও ওই মহিলা যে ভোট দিয়েছেন, তাতে আপ্লুত তিনি।
সোমবার সকালে চালতিয়া শ্রীগুরুপাঠশালায় ভোট দিতে আসেন রেনুকা মার্ডি। লম্বা লাইন দেখে দেরি হবে বলে মাজদিয়া পূর্ব পাড়ার বাড়িতে ফিরে যান তিনি। এরপর বাড়ি গিয়ে দেখেন তাঁর পুত্র রজত মার্ডি (২১) গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন। তড়িঘড়ি তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে দেখে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
[ আরও পড়ুন: বন্ধুত্বের টান! থাইল্যান্ড থেকে চন্দ্রকোনায় হাজির দুই বান্ধবী ]
এরপর রেনুকা মার্ডি ছেলের মৃতদেহ মর্গে রেখেই চলে যান ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। সেখানে নিজের ভোট দিয়ে ফিরে আসেন বহরমপুর মর্গে। এদিন তিনি বলেন, “ছেলে হয়তো মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছে। ভোট হচ্ছে একটা অধিকার। ছেলেটাকে তো আর ফিরে পাব না, কিন্তু একটা ভোটের জন্য কেউ যদি হেরে যান তাহলে সারা জীবনের আফশোস থেকে যাবে।” সে কারণে তিনি ভোট দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর এই বিষয়টি জানা যাবে। তবে হতভাগী মায়ের ভোটদান সেরা ভোট হিসেবেই স্বীকৃতি পেল বহরমপুর লোকসভায় বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ভৌমিক।
এদিকে মাওবাদী হামলায় নিহত বেলডাঙার সিআরপিএফ জওয়ানের বাবা-মাও এদিন ভোট দেন। লোকসভা ভোটে নিজের জেলায় ডিউটি করতে আসার কথাও ছিল জওয়ান নির্মল ঘোষের। কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের গুলিতে নিহত হন। কর্তব্যরত অবস্থায় মাথায় গুলি লেগে নিহত হন তিনি। সেই সন্তান হারা মা-বাবা নিজেদের ভোট দিলেন সন্তানের আত্মার শান্তি কামনা করেই। নির্মল ঘোষের বাবা নারায়ণ ঘোষ বলেন, “একসময় ছেলেকে নিয়েই ভোট দিতে গিয়েছি। কখনও কোলে, কখনও বা পায়ে হেঁটে। কিন্তু সেই নির্মল আর নেই তা ভাবতেও পারি না। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এবং মাওবাদী ও জঙ্গি সংগঠনকে নিকেশ করতে লড়াই আজীবন চলবে। তাই ভোট দিলাম।”
[ আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদির প্রার্থীপদ বাতিল হওয়া উচিত, দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.