ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এককালের লালদুর্গ হিসেবে পরিচিত জঙ্গলমহল সময়ের স্রোতে এখন বামেদের কাছে শুধুই স্মৃতি। ২০১১ সালে পালাবদলের পর থেকে ধাপে ধাপে শক্তি হারিয়ে সিপিএম কার্যত অস্তিত্বহীন। এই চরম দুঃসময়ে ঘুরে দাঁড়াতে এবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা (Jhargram Lok Sabha) কেন্দ্রে বামেদের বাজি অপ্রতিরোধ্য সোনামণি টুডু (Sonamuni Tudu)। হিসেব বলছে বামেদের চরম দুর্দিনেও গ্রামসভা হোক বা পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayet Election), যতবার তিনি লড়াইয়ে নেমেছেন সোনামণির অশ্বমেধের ঘোড়া থামানোর ক্ষমতা হয়নি কারও। স্থানীয় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা সোনামণির উপরই এবার ঝাড়গ্রামে ভরসা সিপিএমের (CPIM)।
২৯ বছর বয়সী সোনামণি টুডুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুর ব্লকের দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কডিহা গ্রামে। বিডিএসএল মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর জামশেদপুর কো-অপারেটিভ কলেজ থেকে ২০১৬ সালে সাইকোজলিতে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১১ সাল থেকে এক রেডিও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই কাজ করার সুবাদে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছেন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন তাদের সমস্যা সমাধানের। সোনামণির রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি ২০১৩ সালে। গ্রামসভার ভোটে জয় পেয়ে দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের জল প্রকল্প ও স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান। এরপর ২০১৫ সালে বান্দোয়ানের বাসিন্দা মণীশ টুডুর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী পেশায় একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী। বিবাহ সূত্রেই বর্তমানে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার অন্তর্গত কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনপানি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাজ্য বদল হলেও সামাজিক কাজে ভাটা পড়েনি সোনামণির। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুচিয়া গ্রামে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয় পান তিনি। ছোট ময়দানে বিপুল সাফল্য পেলেও এবারের লড়াই সরাসরি লোকসভার ময়দানে।
সিপিএমের তরফে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরই জোরকদমে প্রচারে নেমে পরেছেন সোনামণি। প্রচারে একদিকে যেমন তৃণমূল শাসনে রাজ্যে দুর্নীতির কথা তুলে ধরছেন, অন্যদিকে তেমনি কর্মসংস্থান ও ঝাড়গ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বনির্ভরতা লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করছেন। মন্দির মসজিদের রাজনীতি নয়, মানুষের সার্বিক উন্নয়নকে মাথায় রেখে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের মানুষের কাছে। তবে ঝাড়গ্রামের লড়াই এবার বেশ কঠিন হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে এই কেন্দ্রে কালীপদ সোরেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বিজেপি এখনও এখানে প্রার্থী না দিলেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে এসইউসিআই, আইএসএফ। তবে প্রতিপক্ষকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ সোনামণি। তাঁর লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত, ধর্মীয় ভেদাভেদহীন সমাজ ও মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন।
এদিকে ঝাড়গ্রামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে যদি নজর রাখা যায় তবে দেখা যাবে, ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল ঝড়ে কার্যত ফিকে হয়ে গিয়েছে বামেদের লাল দুর্গ। এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী পুলিশবিহারী বাস্কেকে হারিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রের জয় পান তৃণমূল প্রার্থী উমা সোরেন। যদিও তৃণমূলের সেই জয় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা টুডুকে সামান্য ভোটে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। তবে ২০১৪ সাল থেকে এই লোকসভা কেন্দ্রে পালাবদলের অংক চলছে। সেই অনুযায়ী এই কেন্দ্রে এবার সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে বাম প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। যদিও লোকসভা ভোটে হারলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যথেষ্ট ভালো ফল করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতে বামেরাও অবশ্য খুব একটা খারাপ ফল করেনি। ফলে আসন্ন নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জোর টক্করের সম্ভাবনা। সেখানে এলাকাবাসীর কাছের মানুষ, সমাজসেবী হিসেবে এলাকায় পরিচিত সোনামণিকে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহলে লাল দুর্গ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বামেদের চোখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.