স্টাফ রিপোর্টার: কাউন্সিলর টিকিটের আশ্বাস নিয়ে কংগ্রেসে যোগদান করতে চেয়েছিলেন সোনালী গুহ। শুধু তাই নয়, যোগদান প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে আলোচনার মাঝেই সোনালী তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ব্যক্তি-কুৎসা শুরু করেন বলে দাবি করে দলীয় নেতৃত্ব। সেসব শুনতে চায়নি কংগ্রেস নেতৃত্ব। তারা মনে করছে, ব্যক্তি-কুৎসার ‘রসদ’-এর প্রলোভন দেখাতে চেয়েছিলেন সোনালী। সেসবের সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ডে পুরসভা ভোটের টিকিটের আশ্বাসও। তবে যোগদান নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা একপ্রকার পাকা হয়। তার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার মুখেই আচমকা বিজেপিতে যোগ দেন সাতগাছিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক সোনালী গুহ। ঘটনার প্রেক্ষিত প্রকাশ্যে এল রবিবার।
দীর্ঘদিন একেবারে রাজনীতি ছেড়ে বাড়িতে বসেছিলেন সোনালী। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। পাত্তা না পেয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কাজ না হওয়ায় একেবারে বসে যান। শেষে ফের সক্রিয় হন গত মাসের শেষে। তিনি কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন জানতে পেরে কংগ্রেসের তরফ থেকেই যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। কাজটি প্রদেশের অনুমতি নিয়ে শুরু করেন দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক মানস সরকার। সোনালী গুহর বাড়ি মধ্য কলকাতার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ স্কোয়ার চত্বরে। ১ মে সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন মানস। তাঁর মনোভাব বুঝে পরদিনই প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে সোনালীর কথাও বলানো হয়। সোনালী জানান, যোগ দিলে তিনি বৃহস্পতিবার দেবেন। তাঁর ‘ওই দিনটা শুভ’। এমনকী, কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। সোনালীর দাবি মতো একেবারে এত কিছু চূড়ান্ত না করা গেলেও মানস তাঁকে আশ্বাস দেন, শহরে যেদিন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি থাকবেন, সেই দিনই যোগদান করানো হবে।
মানস এর পর বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলতে গত শুক্রবার, ৫ মে সোনালীর (Sonali Guha) সঙ্গে ফের যোগাযোগ করেন। তারপর থেকেই আর সোনালী ফোন ধরেননি বলে জানাচ্ছেন মানস। পরে জানা যায়, ওই দিনই সল্টলেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে বিজেপিতে যোগদানের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ফেলেন সোনালী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোনালীকে বিঁধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মানস। লেখেন, ‘আপনি যে কোনও দলে যোগদান করতে পারেন। কিন্তু এহেন নোংরামি না করলেই পারতেন। এতে আজ নয়তো কাল আপনার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতায় প্রভাব পড়বেই! সকল কংগ্রেস কর্মীরা চিনে রাখুন এই নেতা-নেত্রীদের। ভবিষ্যতে এহেন মানসিকতা ও নিম্নমানের নেতা-নেত্রীরা যেন বাংলার কংগ্রেসে জায়গা না পায়! বিজেপি কর্মীরাও জেনে রাখুন এদের রাজনৈতিক চরিত্র!’ সঙ্গে লেখেন, ‘এহেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা মানুষের জন্যে হতে পারে না। ভবিষ্যতে এরা রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে- শ্রীমতি সোনালী কথাটা লিখে রাখুন। ধিক্কার জানাই আপনার রাজনৈতিক বিচারধারা কে।’
অভিষেককে নিয়ে সোনালীর ব্যক্তি-কুৎসার ইচ্ছা প্রসঙ্গে মানস পরে বলেন, “কংগ্রেস দল কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে না। তাই অভিষেক সম্পর্কে কিছু শুনতে চাইনি।” গোটা ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, “এই যোগদান না হয়ে ভালই হয়েছে। এতে আমাদের দলেরই ক্ষতি হত। কংগ্রেস ব্যক্তিগত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির জায়গা নয়। উনি একটা মঞ্চ চাইছিলেন এইসব কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির জন্য। বিজেপিতে এগুলো হয়। উনি বিজেপিতে গিয়েছেন এসব করতেই। শুনলাম করছেনও। কংগ্রেসে এসব হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.