সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা খরচের টাকা জোগাড় করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সেই আশঙ্কা থেকে যে ছেলে আত্মহত্যা করে বসবেন, তা ভাবেননি কেউই। অথচ বাস্তবে ঘটল তেমনটাই। করোনা অতিমারিতে অমানবিক এই ঘটনার সাক্ষী দুর্গাপুর (Durgapur)। কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বছর একুশের আকাশ কর। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার ভাবনা তদন্তকারীদের।
দুর্গাপুরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কুড়ুরিয়াডাঙার মিলনপল্লির বাসিন্দা নিমাই কর। তিনি পেশায় অটো পার্টসের দোকান মালিক। দিন সাতেক আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন বছর পঞ্চাশের নিমাইবাবু। বর্তমানে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে (ICU) চিকিৎসাধীন তিনি। দুই সন্তানের পিতা নিমাইবাবুর চিকিৎসার জন্য এবার বিলের একাংশ মেটানোর জন্য হাসপাতালের তরফে চাপ দেওয়া হয় বলে নিমাইবাবুর পরিবারের অভিযোগ। বিলের অঙ্ক বাবদ তিন লক্ষ টাকা চাওয়া হয় বলে দাবি পরিবারের।
নিমাইবাবুর বড় ছেলে আকাশ কর হন্যে হয়ে টাকা জোগাড় করতে নামেন। পাড়া-প্রতিবেশী-সহ অন্যান্য জায়গা থেকে লাখ দেড়েক টাকা জোগাড় হলেও বাকি টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে, হাসপাতাল থেকে টাকা জমা দেওয়ার জন্যে দফায় দফায় চাপ দেওয়াও চলছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকেই খোঁজ মিলছিল না আকাশের। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার পর প্রতিবেশীরাই সন্দেহের বশে আকাশের বাড়ির কুয়োতে কাঁটা ফেলেন। ওই কুয়ো থেকেই প্রায় ঘন্টা পাঁচেক পর উদ্ধার হয় আকাশের নিথর দেহ। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকে। তারা আকাশকে নিয়ে দুর্গাপুরের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে তাঁকে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ দেখান মৃত আকাশের প্রতিবেশীরা। ছেলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে দাঁড়িয়ে একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মা রুমা কর জানান, “তিন লক্ষ টাকা চেয়েছিল হাসপাতাল। লাখ দেড়েক টাকা জোগাড় হলেও বাকি টাকা জোগাড় করতে পারছিল না ছেলে। সেই শোকেই আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। হাসপাতালের এই আচরণের বিচার করবে কে?” যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.