স্টাফ রিপোর্টার: বাড়ির উঠানে বিকেলে কবর খোঁড়া৷ রাতে মাকে খুন করে সেই কবরে পুঁতে দেওয়া৷ সকালে মায়ের শেষসঙ্গী খাটিয়াটিকে দরজার সঙ্গে বেঁধে রাখা৷ সারা ঘরে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজোর আয়োজন৷ ঠান্ডা মাথায় পুরো কাজটি করেছে বছর তিরিশের বিশ্বনাথ কুম্ভকার৷ পুলিশের জেরায় প্রথমে এলোমেলো কথা বললেও, শেষে মাকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে সে৷ এরকমই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়া সদরের জুনবেদিয়া পঞ্চায়েতের পাঁচবাগ এলাকায়৷ ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী কবর খুঁড়ে মণিবালা কুম্ভকারের দেহ উদ্ধার করে৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় রং মিস্ত্রি বিশ্বনাথ কুম্ভকার আদতে খুবই মাথাগরম করা লোক৷ কথায় কথায় তার হাত চলে৷ সেই কারণে গ্রামে সবাই এড়িয়েই চলত বিশ্বনাথকে৷ এমনকী বিশ্বনাথের স্ত্রীও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন৷ কিন্তু মায়ের বয়স হওয়ায় ছেলের সঙ্গেই থাকতেন৷ থাকা বলতে ছোট টালি বাড়ির দাওয়ায় একটি খাটিয়াতেই সারা দিনরাত৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, মায়ের সঙ্গে সবসময় দুর্ব্যবহারই করত বিশ্বনাথ৷ কয়েকদিন আগে মেরে মায়ের হাত ও পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷
মায়ের সমর্থনে পড়শিরা কেউ এগিয়ে এলে কাটারি ও কোদাল নিয়েও নাকি বিশ্বনাথ পড়শিদের আক্রমণ করত৷ বিশ্বনাথের কাকিমা ভোগিবালা কুম্ভকার জানান, “সোমবার বিকেলে বাড়ির উঠানে গর্ত খুঁড়তে দেখি বিশ্বনাথকে৷ জিজ্ঞাসা করায় সে বলে ফুলগাছ লাগাবে বলে মাটি খুঁড়ছে৷” অন্য এক প্রতিবেশী জানান, “সকালে দেখি বাড়ির সামনে গর্তটা ভরাট করা হয়েছে৷ উঁচু হয়ে রয়েছে৷ আর মণিবালাদেবীর খাটিয়াটি সোজা করে দরজার উপর রাখা৷ ওই খাটিয়া ছেড়ে উঠতেই পারতেন না মণিবালাদেবী৷ সন্দেহ হয়৷” প্রতিবেশীরাই বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশকে খবর দেন৷ পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তখন বিশ্বনাথ স্নান সেরে সারা ঘরে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজোর আয়োজন করছিল৷ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বাঁকুড়া সদর থানায়৷ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে স্বীকার না করলেও, টানা জেরায় বিশ্বনাথ স্বীকার করেছে তার মাকে খুন করে বাড়ির সামনের উঠোনেই পুঁতে দিয়েছে৷ কিন্তু কেন এই খুন? মায়ের উপর কী এমন রাগ যে অথর্ব মাকে খুন করে ফেলল বিশ্বনাথ? খুনের মোটিভ নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ৷ কারণ, প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সম্পত্তি বলতে প্রায় কিছুই নেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.