রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেও আর দেখত না। সংসার পরিত্যক্ত হয়ে অর্ধোন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পরই সমস্যা মিটল। ওই বৃদ্ধার দায়িত্ব নিল তাঁর ছেলে। তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে মায়ের সঙ্গেই থাকবেন। খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্বামী সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চাকরি করতেন। পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল। কিন্তু দেখে তা বোঝার উপায় নেই! স্বামীর মৃত্যুর পর আলিপুরদুয়ার শহরের দক্ষিণ জিতপুর এলাকার বাড়িতে চরম অবহেলায় আর অনাদরে দিন কাটছিল মিলন পণ্ডিত নামে এক বৃদ্ধার। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিয়ের পর মায়ের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখেননি তিন মেয়ে। ওই বৃদ্ধার বড় ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। বহুদিন আগেই বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। ছোট ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন হাসিমারায়। বৃদ্ধা মায়ের কোনও খোঁজখবরই রাখেন না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পাড়া-প্রতিবেশীরা না দিলে রোজ দু’বেলা খাবারও জুটত না মিলনদেবীর। রোজ সকালে খিদের জ্বালায় প্রায় অর্ধনগ্ন হয়ে চিৎকার করতেন তিনি। এলাকার মানুষ চেয়েছিলেন, অসহায় ওই বৃদ্ধাকে অন্তত হোমে রাখার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। কিন্তু তার আর দরকার পড়ল না। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পর মিলনদেবীর দায়িত্ব নিলেন তাঁর ছোট ছেলে জ্যোতি পণ্ডিত।
বৃহস্পতিবার সকালে হাসিমারা থেকে আলিপুরদুয়ারে বৃদ্ধা মায়ের কাছে চলে আসেন মিলনদেবীর ছোট ছেলে। নিজের হাতে ঘর সাফসুতরো করে মায়ের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এবার থেকে আলিপুরদুয়ারে মিলনদেবীর কাছেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন জ্যোতি। তবে আগে যে মায়ের সঙ্গে তিনি একেবারেই যোগোযোগ রাখতেন না, তা কিন্তু নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিমাসে পেনশন তোলার দিন মিলনদেবীর কাছে আসতেন তাঁর ছোট ছেলে ও বউমা। নতুন পাটভাঙা শাড়ি পরিয়ে ওই বৃদ্ধাকে ব্যাংকে নিয়ে যেতেন তাঁরা। পেনশনের টাকায় হোটেল খাওয়া-দাওয়া করে ফের হাসিমারায় ফিরে যেতেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.