দেবব্রত দাস, খাতড়া: সবুজ রঙ করা কাঠের দরজায় বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘মুরমু বাখোল’। ছাউনি দেওয়া খোলা বারান্দায় বসে আলস্য জড়ানো দুপুরে ৭৫ বছরের বৃদ্ধ গলা খাঁকিয়েই জানিয়ে দিলেন, “ভোট আমরা সবাই দিয়েছি। সকাল সকালই। ভোট দিব নাই-বা ক্যানে? ছেলে মরেছে ঠিকই। তবে ভোটটা দিতে ছাড়ি নাই।”
বৃদ্ধের নাম রামেশ্বর মুর্মু। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানিবাঁধ ব্লকের পুনশ্যা গ্রামের বাসিন্দা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল রামেশ্বরবাবুর মেজছেলে বিজেপি কর্মী অজিত মুর্মুর। দিনটা ছিল ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল। এক বছর এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের পর লোকসভার ভোট। গতবারের ভোটের আগে প্রাণ গিয়েছে ছেলের। কিন্তু তাতে কী? স্বজনকে হারিয়েও নির্বাচন উৎসবে সামিল হয়েছেন রাজনৈতিক সংঘর্ষে বলি হওয়া অজিতবাবুর পরিবার।
রবিবার দুপুরে পুনশ্যা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুরমু বাখোলের খোলা বারান্দায় বসে রয়েছেন মৃত অজিতের বাবা রামেশ্বর মুর্মু। ভোটের কথা জানতে চাইতেই এক লহমায় বললেন, “গতবারের নির্বাচনে গ্রামের লোকদের সঙ্গে অজিত রানিবাঁধে মনোনয়ন তুলতে গিয়েছিল। তখন গন্ডগোলের মধ্যে ওকে ব্যাপক মারধর করেছিল ওরা। সেই আঘাতেই অজিত মারা গিয়েছে। পুত্রশোক কী ভোলা যায়? তবে ভোট দেওয়া আমরা ছাড়িনি। এবার তাই সকাল সকাল গিয়ে ভোটটা দিয়ে এসেছি। আমরা সবাই ভোট দিয়েছি।”
অজিতের ভাই দিলীপ মুর্মু বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটের কথা মনে পড়লে খুবই দুঃখ হয়। ভাবি আর ভোট দিতে যাব না। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, ভোটটা দেওয়া তো আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকার আমরা প্রয়োগ করব না কেন? সেই জন্যই সকাল সকাল বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি।” অজিতকে এখনও ভুলতে পারেননি তাঁর বৃদ্ধা মা শ্রীমতী মুর্মু। চোখের জল মুঝে কোনওরকমে বললেন, “ওই ঘটনার পর আর মনে হয় না যে ভোট দিতে যাই। তবে বিজেপির নেতারা বাড়ি এসেছিলেন। বুঝিয়েছেন, ভোটটা দেবেন। তাই ভোট দিতে গিয়েছিলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.