দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: করোনা আতঙ্কে দীর্ঘদিন উপার্জন বন্ধ। ফলে শূন্য ভাঁড়ার। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্বের বালাই না করেই করোনা পুজো সেরে ও ‘করোনা মাতা’কে ‘কবর’ দিয়ে সংক্রমণের আতঙ্কে ঝেড়ে ফেলে কাজে যোগ দিলেন দক্ষিণ ২৪পরগনার জয়রামখালির কয়েকশো আদিবাসী মহিলা। মঙ্গলবার সকাল থেকে নদী বাঁধ মেরামতির কাজে যোগ দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস, ওই এলাকায় কেউ আর আক্রান্ত হবেন না।
জানা গিয়েছে, এক প্রতিবেশীর মৃত্যুর পর করোনা সংক্রমণের ভয়ে সিঁধিয়ে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং-১ ব্লকের কিনারীঘাটা পঞ্চায়েতের জয়রামখালি গ্রামের ওই এলাকার বাসিন্দারা। গ্রামের মধ্যেই নিজেদের এক রকম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিলেন। সংক্রমণ রুখতে অবশেষে ‘করোনা মাতা’র পুজোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেই মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে, কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে চলে করোনা পুজো। এরপর তাঁরা ‘কবর’ দেন করোনাকে। এতেই তাঁদের স্থির বিশ্বাস যে, ওই গ্রাম এখন করোনামুক্ত। তাই সব জায়গায় অবাধ বিচরণ করতে পারবেন তাঁরা। এই বিশ্বাস থেকেই দীর্ঘদিন পর মঙ্গলবার ১০০ দিনের কাজেও যোগ দিলেন এলাকার মহিলারা।
এই প্রসঙ্গে ক্যানিং-১ ব্লকের বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে বলেছেন, “করোনা একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রমন। এটা কোনও দেবদেবীর বিষয় নয়। জয়রামখালি সহজসরল মানুষজন কেবলমাত্র কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পুজো করেছেন। আমরা কারও বিশ্বাসে আঘাত করতে পারি না। তবে আমরা খুশি ওই মানুষজনকে কাজে যোগ দেওয়াতে পেরেছি।”
প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর বারবার ওই এলাকার শ্রমিকদের একশো দিনের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও কেউ তাতে রাজি হননি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হলেও মৃত্যু ভয়ে কেউই ঘর থেকে বের হননি। ফলে অভাবের তাড়নায় অর্ধাহারেও দিন কাটাতে হয়েছে অনেককে। করোনাকে ‘করব’ দেওয়ার পরই সেই বন্দিদশা ছেড়ে ফের ঘরের বাইরে বের হলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.