সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে গ্রামবাসীদের বাধায় গ্রামে ঢুকতে পারছেন না দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থানার লালবাটি গ্রামের তিন বাসিন্দা। কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট সঙ্গে থাকলেও স্রেফ আতঙ্কের কারণেই গ্রামে ঢুকতে তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কলকাতায় মুকুন্দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন ডায়মন্ড হারবার থানার লালবাটি গ্রামের সুবীর মিস্ত্রি, মিহির মিস্ত্রি, নিতাই নস্কর ও সুদীপ্ত নাইয়া। পেটের দায়ে লকডাউন চলা সত্ত্বেও কাজে বেরোতে হচ্ছে তাঁদের। সপ্তাহে একদিন বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে ফিরতেই একদল গ্রামবাসী তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে এখনই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে সুবীরবাবুর অভিযোগ। এদিকে তাঁরই আরও তিন সহকর্মী মিহির মিস্ত্রি, নিতাই নস্কর এবং সুদীপ্ত নাইয়ারা সপ্তাহান্তে ছুটি পেলেও গ্রামে ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ তাঁদের পরিবারের।
মিহিরবাবুর স্ত্রী রূপাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী সোমবার হাসপাতালের ডিউটি থেকে ছুটি পেলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ফোনে গ্রামের লোক বাড়ি না ফেরার জন্য তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁদের পরিবারকেও বাড়ি এসে ইতিমধ্যেই সাবধান করে গিয়েছেন যাতে তাঁর স্বামী এখন বাড়ি না ফেরেন। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে গ্রামের ওই মানুষজন জানিয়েছেন, এখনই গ্রামে ফেরা যাবে না কারণ তিনি যেহেতু হাসপাতালে ডিউটি করেন তাই তাঁর শরীরেও করোনার সংক্রমণ হতেই পারে। বাড়ি ফিরতে না পারা সুদীপ্ত নাইয়ার স্ত্রী সুচিত্রা নাইয়াও এদিন জানান, তাঁর স্বামীও গ্রামের ওই একদল মানুষের জারি করা ফরমানে বাড়ি আসতে পারছেন না।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, যেহেতু তিনি হাসপাতালে কাজ করেন তাই তাঁর শরীরেও নাকি মারণ ভাইরাস করোনা বাসা বাঁধতে পারে। সুচিত্রাদেবী জানান, গ্রামবাসীদের এই আশঙ্কা অহেতুক কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটিতে যাঁরা গ্রামে ফিরেছেন বা ফিরতে চাইছেন তাঁদের প্রত্যেককেই ফিট সার্টিফিকেট দিয়েছে। সেসব কাগজপত্র সবই তাঁদের সঙ্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানিয়ে ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী ওই চারটি পরিবার।
মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহা এ বিষয়ে জানান, ঘটনার কথা তাঁর কানেও এসে পৌঁছেছে। বিষয়টি তিনি পুলিশ প্রশাসনকে তদন্ত করে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক। প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে স্বামীদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় বিপদগ্রস্তদের পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.