ধীমান রায়, কাটোয়া: বাড়িতে তিন নাবালিকা মেয়েকে রেখে মা এ রাজ্যে এসেছিলেন রোজগারের তাগিদে। পরিকল্পনা ছিল কিছু টাকা রোজগারের পরই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তার মাঝেই বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে করোনা। দেশজুড়ে জারি হয়েছে লকডাউন। ফলে পূ্র্ব বর্ধমানের কাটোয়ার আরএমসি মার্কেটের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আটকে পড়েছেন বিহারের ভাগলপুরের ওই বধূ। এর মাঝেই মোবাইল ফোনে এসেছে চরম দুঃসংবাদ। বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ বছরের মেয়ের। দেহটি পড়ে রয়েছে ঘরেই। শেষবারের মতন মেয়ের মুখটা দেখার কোনও উপায় নেই মায়ের। কাটোয়ার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বসেই চোখের জল ফেলে চলেছেন সন্তানহারা অনিতা দেবী।
বিহারের ভাগলপুর, মুঙ্গের ও বাঁকা জেলা থেকে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুরে আলু তোলার কাজে আসেন ১৬০ জন শ্রমিক। তাঁরা কাজ সেরে ফেরার মুখেই দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তড়িঘড়ি পুরসভার তরফে শ্রমিকদের দুটি গাড়িতে চাপিয়ে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে ঢোকার মুখেই কার্যত লাঠিপেটা করে তাঁদের কাটোয়ায় ফিরিয়ে দেয় ঝাড়খণ্ড পুলিশ। সেই থেকেই তাদের ঠাঁই কাটোয়ার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। সেই দলেই রয়েছেন অনিতাদেবী।
জানা গিয়েছে, ওই বধূর বাড়ি মুঙ্গেরের তাড়ি গ্রামে। মঙ্গলবার সেখান থেকে থেকে তার বড়মেয়ে আরতি কুমারীর (১৫) মৃত্যু সংবাদ এসেছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিল ওই নাবালিকা। যদিও অনিতা দেবীর দাবি, তাঁর ফেরার দুশ্চিন্তায় মৃত্যু হয়েছে মেয়ের। সূত্রের খবর, অনিতাদেবীর স্বামীও পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি পাঞ্জাবের হরিয়ানায় এক গ্রামে কাজে গিয়ে লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে তাঁদের সন্তান। সন্তানের চিন্তায় দিশেহারা স্বামী-স্ত্রী। এপ্রসঙ্গে কাটোয়া পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগেও চেষ্টা করেছিলাম ওই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে। ঝাড়খণ্ড থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফের চেষ্টা করছি যাতে অসহায় মহিলা অন্তত বাড়ি যেতে পারেন।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.