স্টাফ রিপোর্টার: পুর এলাকায় বিশাল জমি। সেখানে যে আবাসন প্রকল্পের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি তার বিক্রির ফর্ম দিচ্ছে প্রমোটার সংস্থা। যা নিয়ে ক্ষোভ তুঙ্গে। অভিযোগ, জমিজট পুরো মেটেনি। ভিতপুজোয় স্থানীয়দের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে। তাই শ্রীরামপুরের ওই প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় পরিবেশবিদরা মাঠে নামতে চলেছেন। তাঁদের দাবি, “একদা এখানে কারখানা ছিল। সেখানে এই প্রকল্পে ফ্ল্যাট কেনার জন্য যাঁরা ফর্ম তুলছেন, তাঁরা না জেনেই মরণকুয়োয় ঝাঁপ দিচ্ছেন।” তাঁদের দাবিতে ইন্ধন জুগিয়েছে একটি প্রশ্ন। পুর-অনুমোদন আছে প্রকল্পের? কেন না পুরসভার চেয়ারম্যান অমিয় মুখোপাধ্যায় নিজেই স্বীকার করেছেন, “সোলারিস সিটি নামে ওই প্রকল্পের প্রস্তাব আমাদের কাছে জমা পড়েছে। কিন্তু তা এখনও অনুমোদন পায়নি। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তাহলে হুগলির এই প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে কী করে? চেয়ারম্যান বলেন, “এই বিষয়টি আমার জানা নেই।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “কোনও কারখানার জমি কিনা সেটা তো পরের বিষয়, প্রকল্পের কোনও কাগজ আমার কাছে এখনও আসেনি।”
[জলের মধ্যেই সঞ্চয় করা যাবে সৌরশক্তি, নয়া আবিষ্কার রাজ্যের বিজ্ঞানীর]
এই আবাসন প্রকল্প নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিছুদিন আগে এই প্রকল্পের একটি বিজ্ঞাপনকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। বিজ্ঞাপনের ভিডিওতে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত বহুল পরিচিত ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ গানটিকে বিকৃত করার অভিযোগ তোলেন বিদ্বজ্জন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষরা। গানটিকে বিকৃত করে ফ্ল্যাটের দাম ও সুযোগ সুবিধার কথা জানানো হয়েছে। পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা ঋদ্ধি সেন বিষয়টিতে প্রথম প্রতিবাদ জানান। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিজ্ঞাপনটিতে অভিনয় করেছেন সোহিনী সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বহু মানুষ। এমন অপরূপ সৃষ্টিকে বিকৃত করার জন্য তাঁদেরও মুণ্ডপাত করা হয় নেটদুনিয়ায়। বাংলা পক্ষ নামে একটি সংগঠন সবচেয়ে বেশি এই বিষয়ে সোচ্চার হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোলারিস কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞাপন সংস্থার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছে। সেই বিতর্কের রেষ কাটার আগেই নয়া বিতর্কে বহু চর্চিত এই আবাসন প্রকল্প।
তবে সৌর আলোকে আলোকিত করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়ার কথা বলছে যে সংস্থা, সেই ইডেন রিয়েলটির কর্মকর্তা বিশ্বজিত গুপ্তের দাবি “আমরা কোনও অনিয়ম করিনি। সবকিছু ঠিক আছে বলেই প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি করছি। জানিনা কেন পুরসভা এই কথা বলছে।” কিন্তু যে প্রকল্প এখনও পুরসভার ছাড়পত্র পায়নি বলে পুরকর্তার দাবি, তা কী করে বিক্রি হচ্ছে? পুরসভার চেয়ারম্যান কি ভুল বলছেন? এই প্রশ্নে বিতর্ক চরমে। তার চেয়েও বড় কথা ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও। সৌরশক্তি ব্যবহারকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রযুক্তিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন তুলেছেন। তা হল, ভবিষ্যতে যখন প্যানেলগুলি খারাপ হবে তখন তা ফের বসাতে বিপুল অর্থ প্রয়োজন। তার জোগান কি আসবে সেই আবাসিকদের পকেট থেকে? তাহলে কম দামে নিম্নবিত্তের জন্য এই আবাসন গড়া হচ্ছে বলে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা রাখা হল কোথায়? জোকায় এই সংস্থা একই ধরনের প্রকল্প করছে। প্রশ্ন তা নিয়েও। সংস্থার দাবি, সেই ব্যবস্থা তারা রেখেছে।
[শিকেয় পঠনপাঠন, স্কুলেই বসল অশিক্ষক কর্মীর ছেলের বিয়ের আসর]
গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে শ্রীরামপুরের ২৪টি টাওয়ারের প্রকল্প হচ্ছে একটি কারখানার জমিতে। সেই কারখানার জমি হাতবদলে বেআইনি কিছু রয়েছে এমন দাবি স্থানীয়রা না করলেও তাঁরা বলেন, “ভিতপুজোর দিন কিন্তু সবকিছু লুকোচাপা ছিল। স্থানীয় কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের নামে ভিতরে কোনও অনিয়ম নেই তো?” নানা বিতর্কের মধ্যেই সোলারিস সিটির প্রচারের বিষয় নিয়ে জল গড়িয়েছে আইনি লড়াই পর্যন্ত। এবং আবাসন নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এখন জল দ্রুত গড়াচ্ছে। তাই প্রমোটার সংস্থার প্রতিশ্রুতি ঘিরে টানাপোড়েনে মানুষ। বাড়ছে উদ্বেগ। সংস্থা অবশ্য চুপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.