দেবব্রত মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: খনিজ শক্তির উৎস শেষ হতে চলেছে পৃথিবী থেকে। ফলে আগামী দিনে দেখা দেবে জ্বালানি সংকট। তাই প্রচলিত শক্তির ভাণ্ডার শেষ হওয়ার আগেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে জোর কদমে চলছে অফুরন্ত শক্তির উৎস সন্ধানের খোঁজ। অফুরন্ত শক্তির অন্যতম বড় উৎস হল সূর্য। কিন্তু রাত নামলেই সৌরশক্তির ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে। যেটুকু কাজে লাগানো যায় তা হল ব্যাটারির মাধ্যমে সঞ্চয় করা শক্তি। তবে, এবার জলের মধ্যেই সৌরবিদ্যুৎ ধরে রাখা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে সুবিধামতো তা ব্যবহার করা যাবে বিভিন্ন কাজে। এই অভিনব পন্থা আবিষ্কার করে নজির গড়েছেন রাজ্যের এক দল গবেষক।
[শিকেয় পঠনপাঠন, স্কুলেই বসল অশিক্ষক কর্মীর ছেলের বিয়ের আসর]
বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সৌরশক্তিকে কিভাবে ২৪ ঘন্টা ধরে সঞ্চয় করে রাখা যায় তার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক দশক ধরে। ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত সৌরশক্তি ধরে রাখাও সুবিধা জনক নয়। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় খরচও বেশি। কোথাও কোথাও বিজ্ঞানীরা সৌরশক্তির সাহায্যে বাতাসকে দিনে উচ্চচাপে সিলিন্ডারে ধরে রেখে রাতে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নুনের ব্যাটারিতে সৌরশক্তি মজুত করার লক্ষ নিয়ে গবেষণা করছেন। এই গবেষণার অন্যতম গবেষক হলেন ড. শান্তিপদ গন চৌধুরী। এবিষয়ে তিনি বলেন, জলকে মাধ্যম করে সৌরশক্তি সঞ্চয় করে ২৪ ঘন্টা বিদুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। এই যন্ত্র সারা বিশ্বের কাছে নতুন আশার আলো। এই নতুন উদ্ভাবন যন্ত্রের পাঁচটি অংশ। সোলার প্যানেল বা সৌরকোষ, মাইক্রোসোলার পাম্প, মাইক্রোহাইডেল যন্ত্র এবং জলের সঞ্চারী উপরে ও নিচে দু’টি ট্যাংক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিশন ইনোভেশন প্রজেক্টে দেশের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী তাঁদের প্রকল্প নিয়ে হাজির হলেও প্রথম পর্যায়ের জন্য পাঁচ জন বিজ্ঞানীকে বেছে নেওয়া হয়। যার মধ্যে ড. শান্তিপদ গন চৌধুরির ‘জলের মধ্যে সৌরশক্তির সঞ্চয়’ বিদুৎ প্রকল্পটি প্রথম স্থান অধিকার করে।
ইতিমধ্যে এই অভিনব প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কাজও শুরু হয়েছে। অসমের আপার কিলিংয়ের কারভি গ্রাম এবং এরাজ্যের উত্তরবঙ্গের চা বাগান অধ্যুষিত আম্বুটি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুটি গ্রামে প্রায় তিনশো পরিবারের বাস। প্রথম পর্যায়ে এই দু’টি গ্রামের মধ্যে যে কোনও একটি গ্রামকে চিহ্নিত করে প্রকল্পটি চালু করা হবে। এই প্রকল্প সফলভাবে চালু হলে গ্রামের মানুষের বিশেষ সুবিধা হবে। সরকারি অর্থে প্রথম দু’বছর প্রকল্পটি চলবে। তারপর থেকে এলাকার মানুষ সমবায় করে এই প্রকল্পটি চালাবে। সরকারি টাকায় সোলার প্যানেল তৈরি করা হবে। বানানো হবে দুটি জলাধার। সেখানে একটি থাকবে মাটির নিচে, অন্যটি থাকবে মাটির উপরে। এর ফলে একটি বিদ্যুৎ সঞ্চয় হবে অন্যটির থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে। আর এই কাজে ব্যবহার করা হবে বৃষ্টির জলকে। গোটা বিষয়টি দেখাশুনা করবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞানীদের মতে এই পদ্ধতি আগামীদিনে সৌরশক্তির জগতে এক সুদূরপ্রসারী পরির্বতন ঘটাবে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে আসতে পারে বিরাট পরিবর্তন। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বড় মাপের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর দুইয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে অভিনব পরিবেশ বান্ধব জলবিদ্যুৎ-সৌরবিদ্যুতের মিশ্র প্রকল্প। এমনকি বাড়িতে বা আবাসনের ওপরেও জলাধার তৈরি করে সৌরশক্তির মাধ্যমে জলকে রি-সাইক্লিং করে ছোট ছোট বিদুৎ কেন্দ্র গড়া যেতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে মাত্র দশ-বারো হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর ৩০০ পরিবারের জন্য ১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুত তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সরকার নতুন এই বড় প্রকল্পের গ্রাহকদের দু’বছর ভরতুকি দেবে।
[বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় স্ত্রীকে দেখলেন স্বামী, তারপর…]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.