অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেনায় জেরবার হয়ে পড়েছিলেন শ্যামল দাস।
আকাশনীল ভট্টাচার্য, বারাকপুর: অভাবের জেরে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী বাবা ও ছেলে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে সোদপুরে। মৃত ব্যক্তির নাম শ্যামল দাস ও নাবালক ছেলের নাম দীপ দাস (১১)। তাঁদের বাড়ি পানিহাটির গান্ধীনগরে। জন্মের পর থেকেই নার্ভের সমস্যায় ভুগছিল দীপ। সেই রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়েই সব খুইয়ে বসেন শ্যামলবাবু। কিছুদিন ধরে এতটাই হতদরিদ্র পরিস্থিতি যে ওষুধ কেনার টাকা ছিল না। তাই হতাশা ঢাকতে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেন ওই ব্যক্তি। বুধবার রাতে সোদপুর ও আগরপাড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী ছ’নম্বর রেলগেটের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ছেলেকে নিয়ে চলন্ত আপ ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন শ্যামলবাবু। তাঁর একটি সাইকেল সারাইয়ের দোকান রয়েছে। সেই দোকানের আয় থেকেই চলত সংসার ও ছেলের চিকিৎসা। দিনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু রোজগারপাতি তেমন ছিল না। তাই ধারদেনা করেই ছেলেকে সুস্থ করতে চেয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু বিধিবাম, ছেলে সুস্থ হওয়া দূরে থাক বাজারে দেনা বাড়ছিল চড়চড়িয়ে। এই ঘটনায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। শেষপর্যন্ত চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। শুক্রবার রাতে অসুস্থ ছেলেকে নিয়েই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন।
জানা গিয়েছে, ১৩ বছর আগে বিয়ে করেন শ্যামল দাস। এরপর ছেলের জন্মের পরেপরেই অসুস্থতা ধরা পড়ে। এই ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন শ্যামলবাবুর স্ত্রী। ছেলে সুস্থ হবে না বুঝতে পেরে তিন বছরের মধ্যেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি শ্যামলবাবু। ছেলেকে মানুষ করার পাশাপাশি তার চিকিৎসাও চালাচ্ছিলেন। কিন্তু দেনার সঙ্গে আর পেরে উঠছিলেন না। শেষপর্যন্ত ছেলেকে রোগযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে তাকে নিয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। দেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে রেলপুলিশ। এহেন মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.