নয়ন মান্না: পঞ্চাশ বছরের পুরনো মনসা পুজো উপলক্ষে কোলাঘাট থানা এলাকার শুলনী গ্রামে শুরু হয়েছে সাপের মেলা৷ সোমবার থেকে শুরু হওয়া সাপের মেলা আগামী ৪ দিন ধরে চলবে৷ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি জেলা থেকে আসা সাপুড়েরা প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষ দিনে সাপের খেলা দেখাতে এই গ্রামে হাজির হন৷ প্রতি পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি, একটু অসতর্ক হলেই বিষধর সাপের ছোবল খেতে হতে পারে৷ যাবতীয় ভয়ভীতিকে সরিয়ে রেখে প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটিতে সাপুড়েরা সাপ খেলা দেখান শুলনীতে৷ কোলাঘাটের এই প্রত্যন্ত গ্রামে সাপের খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ উপস্থিত হন৷ মেলা কমিটির দুই সদস্য সুবোধ পাত্র ও মানিক সামন্ত বলেন, এই মেলার সঙ্গে সাধারণ মানুষের আবেগ ও ভালবাসা জড়িয়ে আছে৷ মেলার বিভিন্ন দিনে পুতুল নাচ, যাত্রাপালা সহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়৷
কোলাঘাটের দেউলিয়া বাজার থেকে অটোয় চেপে শুলনী গ্রামে এই সাপের মেলা দেখতে যেতে হয়৷ শুলনী হাইস্কুল মাঠে এই মেলা বসে৷ হাইস্কুলের অদূরে রয়েছে মনসা মন্দির৷ এই মনসা মন্দিরে সাপের পুজো হয়৷ তার আগে মনসা মন্দির লাগোয়া পুকুরে সাপুড়েরা স্নান করেন৷ এরপর তাঁরা সাপ নিয়ে মন্দির সংলগ্ন মাঠে খেলা দেখাতে হাজির হন৷ পিংলার গোবর্ধনপুর এলাকার সাপুড়ে রাম দাস বলেন, সারা বছর ধরে গ্রামেগঞ্জে মাঠেঘাটে ঘুরে তারা সাপ ধরে বেড়ান৷ এরপর আশ্বিন সংক্রান্তির দিন মনসা মন্দিরে ওই সাপকে পুজো দেওয়া হয়৷ তারপর সাপ নিয়ে খেলা দেখানো হয়৷ অনেক সময় খেলা দেখানোর পর ওই সাপগুলিকে তাঁরা ছেড়ে দেন৷
কালনাগিনী, খরিশ, কেউটে, গোখুরে, লাউডগা সাপ গলায় ও কোমরে জড়িয়ে মেলায় খেলা দেখাচ্ছেন ঘাটালের সাপুড়ে তিমির বর্মন৷ তিমিরবাবু বলেন, ‘‘একটু অসাবধান হলেই সাপের ছোবল খেতে হবে৷ কিন্তু সব অভ্যাস হয়ে গিয়েছে৷ তাই সাপ দেখলে আর ভয় করে না৷ তবে লোভে পড়ে কখনও আমরা সাপের বিষ বিক্রি করি না৷” দশ বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে হাওড়া জেলার বাগনান থেকে সাপ খেলা দেখাতে এসেছেন সমর দিন্দা৷ সমরবাবু ছেলের গলায় দু’টি বিষধর সাপ জড়িয়ে ডান হাতে আরও একটি সাপ নিয়ে দুঃসাহসিকভাবে সাপ খেলা দেখাচ্ছেন৷ কোলাঘাট ব্লক তৃণমূল নেতা রাজকুমার কুণ্ডু বলেন, “এই সাপের মেলার সঙ্গে এলাকার মানুষজনের আবেগ ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে৷ আগামিদিনে এই মেলাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.