সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দশ বছর আগে যে জমিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, জোর করে এখানে শিল্প গড়তে দেবেন না, বৃহস্পতিবার সেখানেই মাঠে নেমে বীজ পুঁতে কথা রাখলেন জমি আন্দোলনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন, দুপুরে সিঙ্গুরের জমিতে সর্ষে বীজ ছড়িয়ে কৃষিকাজের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, “সিঙ্গুর আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে যে লড়াই ছেড়ে কখনও পালিয়ে যেতে নেই৷” সিঙ্গুরের আন্দোলনকারী কৃষকদের স্মরণে একটি স্মারক তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন মমতা৷
যে আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন, সিঙ্গুরে তার সাফল্যের উৎসবে মাতলেন বাজেমেলিয়া-ঘাসেরভেড়ির হাজার কয়েক মানুষ৷ তাঁরই হাত ধরে৷ আজ সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে সেই বার্তাও ফের দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুঝিয়ে দিলেন নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলবে সরকার৷ গায়ের জোরে কারও জমি কাড়া হবে না৷ আবার শিল্প গড়তেও অনুকূল পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরিতে বদ্ধপরিকর রাজ্য৷ শুধু জমি ফিরিয়ে দেওয়া নয় সেগুলি চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার, এদিন সাফ জানান মমতা৷
এদিন সকাল থেকেই সিঙ্গুরের গোপালনগর, বাজেমেলিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল উচ্ছ্বাস, উল্লাস, উৎসবের মেজাজ৷ বেলা পৌনে দুটোয় গাড়ি থেকে নেমে আলপথ ধরে সোজা পৌঁছে গেলেন মাঠের মাঝখানে৷ ঘুরে দেখলেন কৃষকদের তুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কৃষিজমি৷ ছড়িয়ে দিলেন সর্ষের বীজ৷ সঙ্গে হুগলির জেলাশাসক পবন বনশল ও পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী৷ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গোপালনগর মৌজা থেকে শুরু হল কৃষকদের জমি ফেরানোর কাজ৷ সম্পূর্ণ হল বৃত্ত৷ এদিন সকালেই সিঙ্গুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ পার্থবাবু প্রথমেই পৌঁছে পুরো কর্মসূচির তদারকি করেন৷ ছিলেন আমলারাও৷ আগে থেকেই তালিকা ঠিক ছিল কৃষকদের৷ মাঠেই মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল৷ এটা বোঝাতে যে এই সাফল্যের উৎসব, লড়াইয়ের জয়গান কৃষকদের জন্য৷ সেখান থেকেই জমি ফেরানোর কাজ শুরু হল মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে৷
গত ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরের জমি ফেরাতে হবে বলে রায় দিয়েছিল৷ আদালতের নির্দেশ মেনেই একটুও সময় নষ্ট না করে কাজ শুরু করে দিয়েছিল রাজ্য৷ তবে কাজ শেষ করাটা মোটেই মাখনের উপর ছুরি চালানোর মতো ছিল না৷ প্রকল্প এলাকার মধ্যে থাকা বিদ্যুতের সাবস্টেশন সরানো, টাটাদের কারখানার শেড ভাঙা, অন্যান্য বহুবিধ ছোটখাটো নির্মাণ তুলে ফেলে জমিকে পুরোপুরি চাষযোগ্য করে তুলতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ কিন্তু কোনওভাবেই নির্দিষ্ট সময়সীমা যাতে পার না হয় সেদিকে নজর রেখেছিল সরকার৷ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে সেখানে সভা করেছেন৷ আদালতের লড়াই এবং তাঁর মাঠে নেমে পড়ে থাকার জিত উৎসর্গ করেছেন এখানকার কৃষকদেরই৷ ফের আজ সেখানে পৌঁছে তিনি কৃষকদের পাশে তো বটেই, একধাপ এগিয়ে কৃষকদের সঙ্গে৷ মাঠে নেমে মুখ্যমন্ত্রী ধানের চারা রোপণ করছেন৷ এই ছবি কে কবে দেখেছে৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে কথা রাখেন৷ সেটা ফের বোঝালেন তিনি৷ এমনিতেই মন ভাল নেই তাঁর৷ সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি৷ সকালে সেখানে না গিয়ে তিনি সিঙ্গুরমুখী৷ বিকেলে যাবেন অভিষেককে দেখতে৷ এদিন গোপালনগর মৌজায় একশো একর জমি, বিভিন্ন ফসলের বীজ তুলে দেওয়া হল কৃষকদের হাতে৷ মূল গেটে ঝুলছে ‘কৃষক ছাড়া কারও প্রবেশ নিষেধ’৷ সত্যি সিঙ্গুর আজ কৃষকের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.