শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: কেঁচো খুড়তে একেবারে কেউটে। আলিপুর সংশোধনাগার থেকে বাংলাদেশি বন্দি পালানোর পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলে শুরু হয় খানা-তল্লাশি। প্রশাসন নড়েচড়ে বসার পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। বুধবার জলপাইগুড়ি জেল থেকে উদ্ধার হয় ২৫টি মোবাইল ফোন। এবার জানা গেল শুধু ফোন নয়, চোরাপথে সিম কার্ডও পাচার হচ্ছে সংশোধনাগারে।
[রাজ্যে দুর্ঘটনা কমল তিন হাজার, ধীরে ধীরে কমেছে মৃত্যুর হারও]
খোঁপা এবং ফলের মধ্যে থেকে জেলের মধ্যে ঢুকছে সিম কার্ড। কীভাবে চলছে এই অসৎ চক্র? সূত্রের খবর, এই সমস্ত ক্ষেত্রে ম্যানেজ করা হয় মূলত মহিলাদের। তাঁদের লম্বা চুলের খোঁপার ভাঁজে নিপুণভাবে আঠা দিয়ে সিম কার্ড আটকে দেওয়া হয়। তারপর ওই মহিলারা জেলে গিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি আরও একটি ছক রয়েছে। তা হল ফলের ব্যাগ। আপেল, ন্যাশপাতির মতো ফলের মধ্যে সিম কার্ড কায়দা করে গেঁথে দেওয়া হয়। কারারক্ষীর ফলের প্যাকেট দেখে সেভাবে সন্দেহজনক কিছু পেতেন না। তাই সহজে ফলের মধ্যে দিয়ে জেলে ঢুকে যাচ্ছিল সিম কার্ড। কারণ মোবাইলের মতো বড় সামগ্রী পাঠানোর তুলনায় সিম ঢুকিয়ে দেওয়া তুলনামূলক সহজ। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কীভাবে এত বড় ঘটনার টের পেত না জেল প্রশাসন? তার তদন্তে উঠে এসেছে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য। ২০১৩ সাল থেকে জলপাইগুড়ি জেলা সংশোধনাগারের স্ক্যানার খারাপ। এরপর থেকে কয়েকবার ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আদৌ কিছু হয়নি। তার ফলে এভাবে ঢুকে পড়ছে সিম কার্ড। আর মোবাইল ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে দেওয়ালের বাইরে থেকে।
[পাঁচিল টপকে জেলে উড়ে আসছে মোবাইল! জলপাইগুড়িতে জালের ঘেরাটোপ]
এই ঘটনায় সংশোধনাগর কর্তৃপক্ষ যে অসহায় তা তাঁদের কথাবার্তায় স্পষ্ট। বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতির কার্যকরী সমিতি রিপন কর জানান, তাঁরা কত দিকে আর নজর দেবেন? ১৪০০ -এর উপর বন্দির নিরাপত্তায় রয়েছেন মাত্র ১০০ জন কর্মী। এদের মধ্যে কেউ ছুটিতে বা অসুস্থ কারও ট্রেনিং রয়েছে। এই অবস্থায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন কর্মীকে দিয়ে এত বন্দির নিরাপত্তা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার কোনও গণ্ডগোল হলে জেল কর্তৃপক্ষ রক্ষীদের দিকেই আঙুল তোলে। বুধবার এআইজি কারা কল্যাণ প্রামাণিক জেলে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালান। তারপরই মেলে গোছা গোছা মোবাইল। যার মধ্যে ছিল বেশ কিছু অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সূত্র ধরে এবার হাতে এল সিম কার্ড সংক্রান্ত বিস্ফোরক তথ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.