সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: শনিবার বিকেল। হঠাৎই বাড়ির সামনে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের দুধসাদা গাড়ি এসে থামল। তখনও শিলিগুড়ির চম্পাসারির সরকার পরিবার বুঝে উঠতে পারেনি মন্ত্রীর এই আচমকা আগমনের কারণ। মন্ত্রী যখন বন্ধ খাম এগিয়ে দিলেন, তখনও মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন শুভঙ্কর সরকার। খাম যখন খুললেন, তখন এক লহমায় বদলে গেল জীবন। মন্ত্রীর দেওয়া খামে রয়েছে নিরাপদ জীবনের আশ্বাস। বাবা মারা যাওয়ার পর যে চাকরির আরজি নিয়ে সরকারি অফিসের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন শুভঙ্কর, সেই চাকরি অবশেষে মিলল ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ জানিয়ে। রবিবার পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী গৌতম দেবের অফিসে বসে সে কথাই জানালেন তিনি। কণ্ঠে উপচে পড়ল খুশি।
মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমার কাছে শুভঙ্কর আগেই এসেছিলেন। আমি সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তবে সেসময় কোনও কারণে কাজ হয়নি। পরে ‘দিদিকে বলো’তে উনি অভিযোগ জানান। নবান্নের নির্দেশে তাঁকে কাজে যোগদানের জন্য চিঠি তুলে দিয়েছি।” শুভঙ্করবাবুর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ঘুরে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিই। কোনও কাজ হবে ভেবে অভিযোগ করিনি। তাতে এভাবে সমস্যার সমাধান হবে, তা ভাবতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী ও পর্যটন মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবো।” তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমে চাকরি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
কর্মরত অবস্থায় বাবা সুধাংশুবাবু মারা গিয়েছেন পাঁচ বছর আগে। তিনি জলদাপাড়া টুরিস্ট লজের কর্মী ছিলেন। সেই সূত্রে চাকরির দাবি জানিয়েছিলেন শুভঙ্কর। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিভিন্ন জায়গায় ফাইল নিয়ে ঘুরে শিকে ছেঁড়েনি। গিয়েছিলেন পর্যটন ন্ত্রী গৌতম দেব এর কাছে। তিনি আশ্বাস দিলেও তাতেও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে কোনওরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর জনসংযোগের কর্মসূচি ‘দিদিকে বলো’র প্রচার শুনে সেই নম্বরে তার দুরবস্থার কথা জানিয়েছিলেন।
স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কীভাবে কোনও রকমে জীবন যাপন করতে হচ্ছে সেই দুর্দশার কাহিনী তুলে ধরেছিলেন তিনি ‘দিদিকে বলো’–তে ফোন করে। সেখানকার আধিকারিকরা তাঁর সমস্ত বিবরণ এবং বক্তব্য টুকে নিয়েছিলেন। তবে তাতে যে কাজ হবে, সেটা ভাবতে পারেননি ওই যুবক। শেষ পর্যন্ত আর্জি জানানোর চার মাসের মধ্যে ওই এক ফোনেই হলো কাজ। শনিবারই তাঁর বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাপত্র এবং জয়েনিং লেটার তুলে দেন গৌতমবাবু। তবে পাকাপাকিভাবে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয়েছে তাঁকে। দু’ এক দিনের মধ্যেই তিনি কলকাতায় যাবেন বলে জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.