অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: শুধুই কি আন্দোলন, বিক্ষোভই প্রতিবাদের রাস্তা? এই ধারণা যে অভ্রান্ত নয়, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিতে নিজের মতো করে প্রতিবাদে নেমেছেন শিলিগুড়ির (Siliguri) এক শিক্ষক। ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে রাজ্যজুড়ে সরকারি কর্মীদের আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এখনও ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভে শামিল যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা। দাবি একটাই, বর্ধিত হারে ডিএ (DA) ঘোষণা করতেই হবে। এটা তাঁদের হক। সেই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্য হয়েও অবশ্য ধর্মতলায় আসতে পারেন না প্রবীর বর্মন, শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। তাও শিক্ষণীয়।
সরকারি কর্মীরা এই মুহূর্তে মাত্র ৬ শতাংশ মহার্ঘভাতা পান। দাবি, কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে তাল রেখে তা ৪২ শতাংশ করা হোক। এই দাবিতেই তাঁরা অনড়। এদিকে রাজ্য সরকারেরও স্পষ্ট দাবি, রাজ্যের কোষাগারে টান, এর বেশি ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও সাধ্যমতো তা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের এই ভূমিকায় একেবারেই সন্তুষ্ট নন কর্মী, সমর্থকরা।
এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ির প্রবীর বর্মন এই ৬ শতাংশ ডিএ-ও গ্রহণ করেন না। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মহার্ঘভাতার টাকা আসা মাত্রই তিনি তা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে ফেরত পাঠান মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। প্রবীরবাবু জানান, প্রতি মাসে বেতনের (Sallary) সঙ্গে ডিএ-র টাকাও পান তিনি। কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করবেন না বলে ফেরত পাঠিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ”ওই টাকা আমি নেব না। ডিএ আমাদের হকের। তা যথাযথ হারে দেওয়া না হলে এটুকু দয়ার দানে আমাদের প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে ওই টাকা রাজ্য সরকার জনকল্যাণে কাজে লাগাক। তাই আমি ফেরত পাঠিয়ে দিই।”
এসএসসি-তে (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে পরিস্থিতি তাতে চাকরি না পাওয়া আন্দোলনকারীদের পাশে রয়েছেন প্রবীরবাবু। শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের শিক্ষকের বক্তব্য, ”আমাদের সরকার যেসব দলের সঙ্গে জোট গড়ে লোকসভা নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে, তাদের মুখ্যমন্ত্রীরাও নিজেদের রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়িয়েছেন। সরকারের দাবি, ডিএ অধিকারের বিষয় না, অতিরিক্ত দান। বিভিন্ন প্রতিনিধিরা আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে অপমানজনক কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন, অন্যান্য রাজ্যের সরকার কি নিজেদের কর্মীদের ডিএ-র মধ্যে দিয়ে ঘুষ দিচ্ছেন?” যতক্ষণ না দাবিমতো মহার্ঘভাতা পাওয়া যাবে, ততক্ষণ এভাবেই তিনি সামান্য টাকা ফেরত পাঠাবেন, এটাই পণ বাংলার শিক্ষকের। এই প্রতিবাদের জোরও তো কম নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.