সঞ্জীব মণ্ডল, শিলিগুড়ি: পাঁচ মিনিটের হেরফের। আর তাতেই তিন নেপালি যুবতীকে সুদূর কেনিয়াতে পাচারের পরিকল্পনা গেল ভেস্তে।
শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরের ঘটনা। খবর পেয়ে শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ১৯ থেকে ২১ বছর বয়সি ওই তিন যুবতীকে উদ্ধার করে তুলে দেন নেপালের কাঁকরভিটা পুলিশের হাতে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও উদ্ধার হওয়ার পর ওই তিন যুবতীই জানিয়েছেন, অল্পের জন্যই পাচারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু উদ্ধার হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের কার্যত লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁরা নিজেদের পাসপোর্ট লুকিয়ে রেখেছিলেন স্যানিটারি ন্যাপকিনের মধ্যে। যুবতীরা জানান, যারা তাঁদের কেনিয়াতে নিয়ে যাচ্ছিল তাদের নির্দেশেই এমনটা করেছিলেন তাঁরা।
স্বেচ্ছাসেবীদের অনুমান, এমনটা করার মূল কারণই হল যাতে তাঁদের কাছে পাসপোর্ট রয়েছে এবং তাঁরা বিদেশে যাচ্ছে, এ বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ না হয়। পাচারকারীদের এজেন্ট এক মহিলার কথা অনুযায়ী, কাঁকরভিটা থেকে বেসরকারি গাড়ি ধরে বৃহস্পতিবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছায় ওই তিন যুবতী। তাঁদের বিমানের টিকিট-সহ যাবতীয় ব্যবস্থা ওই এজেন্টই করে দেয়। বাগডোগরা থেকে বিমান ধরে প্রথমে মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থকে পরে কেনিয়া। কিন্তু যে বিমানে মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল সেটি ধরতে বিমানবন্দরে আরও পাঁচ মিনিট আগে পৌঁছাতে হত। বিমান মিস করায় স্থানীয় একটি হোটেলে বসে কাঁদছিলেন যুবতীরা। ঠিক সেই সময়ই সন্দেহ হয় হোটেলের কর্মীদের। তাঁরাই গোপনে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের খবর দেন।
মহিলা পাচার রুখতে কাজ করা ওই সংস্থার কর্মীরাই পুলিশে খবর দেন। পাশাপাশি তিন যুবতীকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থাও করেন। তাঁদের কাছ থেকে সবটা শুনে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা নিশ্চিত হয়ে যান যে কেনিয়াতে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করা হচ্ছিল তিনজনকে। আরও জানা গিয়েছে, কেনিয়াতে ফর্সা, সুন্দরী নেপালি যুবতীদের বেশ চাহিদা রয়েছে। তা পূরণ করতেই বিভিন্ন পানশালাতে সুন্দরী যুবতীদের রাখার জন্য বেশ মোটা টাকা খরচ করা হয়। এজন্য একটি পাচার চক্র সক্রিয়। ওই পাচার চক্রের পাণ্ডা শাহুজি বলে জানা গিয়েছে। সাধারণত হিন্দিতে কথা বলে ওই শাহুজি। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সে চক্রের এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করে। জানা গিয়েছে, কেনিয়াতে মোটা টাকার কাজের টোপ দিয়ে সুন্দরী যুবতীদের ফাঁদে ফেলতে অগ্রিম ৫০-৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও গ্রামের যুবতীরাই লক্ষ্য এই চক্রের। বিদেশে যাওয়ার আগে পাসপোর্ট তৈরি করা, পরিবহণ খরচ-সহ যাবতীয় খরচ অগ্রিম দেওয়া হয়। বিদেশে গিয়ে কাজ করার পর ওই টাকা শোধ দিলেই চলবে বলে জানানো হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই সেই অর্থ মকুব করে দেওয়া হয়। তবে এই টাকা দেওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে বলে দেয় তারা। বোঝানো হয়, বিমানে না ওঠা পর্যন্ত বিষয়টি পাঁচকান না করতে। তাহলে ভাল কাজ মিলবে না। প্রতিযোগিতা বাড়বে বলেও ভয় দেখানো হয়। এরপর বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন পানশালা এবং দেহব্যবসার কাজে লাগানো হয় তাদের। এমনটাই জানতে পেরেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। ‘টাইনি হ্যাণ্ডস’ নামে ওই সংস্থার দিবস নামে এক প্রতিনিধি বলেন, ওই তিন যুবতীকে শুক্রবারই নেপাল পুলিশের মাধ্যমে তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও পাচারের মুখ থেকে একাধিক তরুণী উদ্ধার করেছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.