অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পরিবারের একমাত্র ভরসা। দুর্দিন ঘোচাতে তাঁর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বাবা-মা। কষ্ট করে ছেলেকে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। ছেলে অবশ্য হতাশ করেননি। নামী বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল গোটা পরিবারের। যখন মঙ্গলবার ফোনটা এল, যে সিকিমে (Sikkim) তুষারধসে মারা গিয়েছে ছেলে, মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা রায়চৌধুরী পরিবার। একমাত্র ছেলে সৌরভ রায়চৌধুরী অফিসের কাজে সিকিম গিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। শিলিগুড়ির (Siliguri) ৩১ নং ওয়ার্ডের শক্তিগড়ের বাসিন্দার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা পরিবার।
শক্তিগড়ের বাসিন্দা নীলেশ রায়চৌধুরী কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী বেবি রায়চৌধুরী আগে আয়ার কাজ করলেও এখন পুরোপুরি গৃহবধূ। তাদেরই একমাত্র পুত্রসন্তান সৌরভ রায়চৌধুরী। নীলেশ রায়চৌধুরী অনেক কষ্ট করে ছেলেকে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। তার কারণ, তাঁদের আশা ছিল, ছেলে বড় হলে সংসারের হাল ধরবে। সেইমতোই ছেলে বড় হয়ে একটি নামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পান। সব কিছু ভালই চলছিল। সৌরভ চাকরি পাওয়ায় মা বেবি রায়চৌধুরী আয়ার কাজ ছেড়ে দেন।
কাজের সূত্রেই ১ এপ্রিল সিকিম গিয়েছিলেন সৌরভ, সঙ্গী আরও দুই সহকর্মী। সোমবার রাতেও বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সেটাই তাঁর সঙ্গে শেষ কথা ছিল, তা জানা ছিল না বাবা-মায়ের। কারণ, মঙ্গলবার ছুটি থাকায় তাঁরা সকলে মিলে বরফ দেখতে ছাঙ্গু লেকে (Changu Lake) যান। সেখানে ১৫ মাইলের কাছে তুষারধসে মৃত্যু হয় সৌরভের। গুরুতর জখম হয়ে সিকিমের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর দুই সহকর্মীও। রঞ্জিত দাস ও পাপল সরকার।
এদিকে বুধবার বিকেলে কফিনবন্দি সৌরভের নিথর দেহ বাড়ি ফেরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পাড়া। কারণ নিজের পাড়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন সৌরভ। তাই তাকে শেষবারের মত দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল। প্রত্যেকের চোখের কোণে জল। সকলেই বাকরুদ্ধ ও হতবাক হয়ে গিয়েছে এই ঘটনায়। মৃত সৌরভের কাকিমা রুনু রায়চৌধুরী বলেন, “বৃহস্পতিবার ওর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কাজের সময় ওদের ফুরসত থাকে না। কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার কথা জানতাম না। যখন ওর মৃত্যুর খবর পেলাম, তা বিশ্বাস করতে পারিনি।” অন্যদিকে, এই খবর পেয়েই তার বাড়িতে যান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি গিয়ে তার বাবা-মা-ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি বলেন, “পুরনিগম এই পরিবারের পাশে রয়েছে। তাদের সবরকম সহযোগিতা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.