সব্যসাচী ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ কর্মজীবনে ছুটি নেওয়া তো দূর অস্ত, রবিবার বা অন্য কোনও ছুটির দিনেও স্কুলে চলে আসেন। স্কুলের বাগানে জল দেন কিংবা ভোকেশনাল কোর্সের পঠনপাঠনে সাহায্য করেন। শুনতে অবাক লাগলেও, এটা নিত্যদিনের রুটিন শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া মুরালিগঞ্জ স্কুলের কর্মী প্রেমলাল সিংহের। কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠায় অভিভূত স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকরা ও অন্যন্য অশিক্ষক কর্মচারীরা।
[জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা অনুব্রতর, গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল জেলা সভাপতি]
বছর আটচল্লিশের প্রেমলালের বাড়ি স্কুল থেকে দু’কিলোমিটার দূরে জাগিরভিটা এলাকায়। ২০০৪ সালে ফাঁসিদেওয়া মুরালিগঞ্জ স্কুলে অশিক্ষক কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন প্রেমলাল সিংহ। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ওই স্কুলের চাকরি করছেন তিনি। কিন্তু, ছুটি নেননি একদিনও! কিন্তু, কেন? রোজ এভাবে স্কুলে আসতে ভাল লাগে? প্রেমলাল সিংহের বক্তব্য, নিখাদ ভালবাসা থেকেই রোজ স্কুলে চলে আসেন তিনি। একদিনও স্কুলে না এসে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন না। এমনকী, রবিবারও স্কুল অন্তপ্রাণ মানুষটির রুটিনে কোনও বদল হয় না। প্রেমলালের তিন ছেলে। সকলেই ফাঁসিদেওয়া মুরালিগঞ্জ স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ভরা সংসার। সাংসারিক দায়িত্ব সামলে রোজ স্কুলে আসতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে প্রেমলালকে। কিন্তু, কোনওদিন স্কুল কামাই করেননি। একবার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রাতে স্ত্রীর পাশে থাকলেও, সকলকে অবাক করে দিয়ে সকালে স্কুলে চলে এসেছিলেন প্রেমলাল।
[পরিচ্ছন্নতার ‘বাতিক’, প্রতিবেশী শিক্ষকের মারে গুরুতর জখম প্রৌঢ়]
যেদিন স্কুল খোলা থাকে, সেদিন সকাল দশটার মধ্যে চলে আসেন প্রেমলাল সিংহ। নিজের হাতে স্কুলের প্রতিটি ক্লাসরুমের দরজা খোলেন তিনি। এরপর নানা ধরণের কাজ করতে হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে একই রুটিনে কাজ করতে এতটুকু ক্লান্ত হন না স্কুলের ওই কর্মী। বরং রীতিমতো প্রত্যয়ের সঙ্গে প্রেমলাল সিং জানালেন, ‘১৪ বছর যখন এভাবেই কাজ করে যেতে পেরেছি, বাকি কর্মজীবনটাও একইভাবে কাটিয়ে দিতে চাই।’ অশিক্ষক কর্মীটির নিষ্ঠায় মুগ্ধ ফাঁসিদেওয়া মুরালিগঞ্জ স্কুলের প্রধানশিক্ষক সামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রেমলালের কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখলে অবাক হতে হয়। অনেক সময় বলেও ওকে ছুটি নেওয়ানো যায়নি।’
[চাক ভাঙার লোক নেই, মৌমাছি-আতঙ্কে তটস্থ চাঁচোলের সরকারি হাসপাতাল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.