ছবিতে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে আইনজীবীরা।
সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: শুরুটা হয়েছিল নতুন আদালত ভবন তৈরির দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে। শেষপর্যন্ত মূল দাবি থেকে সরে এসে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবীরা। গোটা ঘটনায় বাম-কংগ্রেস সমর্থিত আইনজীবী সেলের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। শোনা যাচ্ছে প্রকারান্তরে তৃণমূল সমর্থিত আইনজীবী সেলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতেই ধস্তাধস্তির ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে। বুধবার আদালত চত্বরে আইনজীবীদের হাতাহাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিলিগুড়িতে।
শহরে নতুন আদালত ভবনের দাবি তুলে ফের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। ইতিমধ্যেই এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। আদালত চত্বরে মঞ্চ তৈরি করে ধরনায় বসেছেন আইনজীবীরা। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে সেই ধরনা মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ক্ষুদ্ধ শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। শিলিগুড়ি আদালতে অচলাবস্থা কাটাতে আন্দোলনরত আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। বলা বাহুল্য, সেই আলোচনায় কোনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। তাই টানা কর্মবিরতিতে যান আইনজীবীরা। গত সোমবার আন্দোলনরত আইনজীবীদের মধ্যে নতুন করে অশান্তি তৈরি হয়। কংগ্রেস সমর্থিত আইনজীবী সেল শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন নিয়্ন্ত্রণ করলেও এই মুহূর্তে আইনজীবীদের বড় অংশই তৃণমূলের নির্দিষ্ট সেলের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। সেই সদস্যরাই অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন অভিযোগ। সমস্যার শুরু তৃণমূলের আইনজীবী সেলের সদস্য তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণ সরকারকে নিয়ে। সূত্রের খবর, অরুণবাবুর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে অস্বীকার করেন তৃণমূলের আইনজীবী সেলের একাংশ। শুধু তাই নয়, কর্মবিরতি থেকে সরে দাঁড়ান তাঁরা। অন্যদিকে বাকিরা কিন্তু অরুণবাবুর সমর্থনে আন্দোলনরত আইনজীবীদের সঙ্গেই থেকে যান।
এই ঘটনায় তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসছে বুঝতে পেরে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। আচমকাই আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যাওয়া আইনজীবীরা ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। তৃণমূলের আইনজীবী সেলের দাবি, বামসমর্থিত আইনজীবীরাই ঘোঁট পাকিয়েছেন। এই খবর চাউর হতেই খেপে যান বাম সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন ডেমোক্রেটিক লইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের(ডিএলএ) সদস্যরা। বুধবার অরুণ সরকারে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের আইনজীবীরা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলেই মারমুখী হয়ে ওঠেন ডিএলএ-র সদস্যরা। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে তৃণমূলের আইনজীবী সেলের তরফে অভিযোগ, কংগ্রেস সমর্থিত বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁদের বিরোধিতা করছে বাম ও বিজেপিরা। যদিও বিরোধীদের পালটা দাবি, গোষ্ঠী কোন্দল চাপা দিতেই এই কর্মবিরতির আন্দোলনকে রাজনৈতিক রং দিতে চাইছে তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি কমিশনারেট হলেও উত্তরবঙ্গে কোনও মেট্রোপলিটন কোর্ট নেই। সেই কোর্টের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। দু’বছর আগে তাঁদের দাবিতে সাড়া দিয়ে নতুন আদালত ভবন তৈরিতে আগ্রহী হয়েছিল রাজ্য। কিন্তু বর্তমান আদালত চত্বর এলাকা ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ায় শহরের অন্যত্র নতুন ভবন তৈরির কথা জানানো হয়। খবর পেয়েই আইনজীবীরা বেঁকে বসেন। তাঁদের দাবি, অন্য কোথাও নয়, পুরনো আদালত চত্বরেই হবে ভবন। রাজ্যের সঙ্গে মতবিরোধে গোটা প্রক্রিয়াই থমকে গিয়েছিল। এদিকে আদালত চত্বরেই রয়েছে এসডিএ অফিস। কিছুদিন আগে সেই অফিস সংস্কারের কাজ শুরু হতেই ফের নতুন আদালত ভবনের আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.