একবিংশ শতকেও লিঙ্গ বৈষম্য ঘুচল না। কন্যাসন্তানের জন্ম অনেকের কাছে অপরাধের মতো। এভাবে এসে গেল আরও একটা নারী দিবস। সমাজে নারী-পুরুষের তফাতের মধ্যে নিজেদের মতো করে মাথা উঁচু করে এগোনোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। বাংলার নানা প্রান্তে রয়েছে এমন অজস্র সম্ভাবনা। সেই অর্ধেক আকাশের খোঁজে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। এই সব আন সাং হিরোইনদের নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন ‘তোমারে সেলাম’। আমাদের প্রতিনিধি শিলিগুড়ির সংগ্রাম সিংহরায়, এক যোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করালেন।
দিনের পর দিন একার হাতে দায়িত্ব সামলেছেন। কখনও অন্য সহকর্মী ছুটিতে থাকলে উপরি দায়িত্ব পালন করছেন বাড়তি পরিশ্রম করে। পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে নাইট ডিউটি করে বাড়ি ফিরে দায়িত্ব নিয়েছেন দুই ছেলের পড়াশুনোরও। তিনি শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের ইতিহাসের একমাত্র মহিলা স্টেশন মাস্টার প্রতিমা দে। এর আগেও বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রশংসিত হয়েছেন, এবার তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি মিলছে নিজের কর্মস্থল ভারতীয় রেল থেকেই।
[প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে জয়ী জীবনের যুদ্ধে, পড়ুয়াদের কাছে প্রেরণা এই শিক্ষিকা]
এই কৃতী মহিলার সাফল্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে নারী দিবসে তাঁকে পুরস্কৃত করল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে ওমেন ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। বৃহস্পতিবার বিহারের কাটিহারে কোসি রেলওয়ে অফিসারস ক্লাবে প্রতিমাদেবীকে সম্মানিত করা হয়। এমন স্বীকৃতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই রেলকর্মী। বাড়িতেই হয় একপ্রস্থ উৎসব। বাড়িতে আসা অতিথিদের মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে। প্রতিমাদেবীর স্বামী তনুজবাবুও রেলকর্মী। তিনিও স্ত্রীর এই সাফল্যে আপ্লুত। মায়ের সাফল্যে খুশি দুই ছেলে- সপ্তম শ্রেণির দেবানুজ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির স্বস্তিকও।
[লাঠি-কুড়ুল হাতে অরণ্য বাঁচাচ্ছেন জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীবাইরা]
অথচ প্রথমদিকে স্ত্রীর চাকরিতে মত ছিল না তনুজবাবুর। কীভাবে সংসার সামলে চাকরি করবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছিল ধন্দ। ক্রমশ চাকরি ও ঘর সামলে এখন বাড়ির সকলের কাছেই তিনি আক্ষরিক অর্থেই নয়নের মণি। কেমন লাগছে এই দ্বৈত ভূমিকা? প্রতিমাদেবী জানালেন, কাজের যা ধরন, তাতে ডিউটির সময় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাড়ি থাকার সময় তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এই রেলকর্মীর কথায়, ‘‘গত তিন বছরে যেভাবে কাজে মন দিয়েছি, অবশেষে কোথাও যে একটা স্বীকৃতি মিলছে তাতে আমি খুশি। পরিবারের সকলের মুখে হাসি দেখে আরও ভাল লাগছে।”
২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রেলের চাকরিতে যোগ দেন প্রতিমা দে। ট্রেনিংয়ের পর ২১ জুলাই শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের প্রথম মহিলা স্টেশন মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। বাবা সুনীলচন্দ্র দাস সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার। বাবার চাকরির সূত্রেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হওয়ার পরই স্বামীকে লুকিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেন। বাকিটা ইতিহাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.