অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে 'মৃত্যু পথযাত্রী' অভিযুক্ত, এজলাসের বাইরে এসে রায় শোনালেন বিচারক। নিজস্ব চিত্র।
সম্যক খান, মেদিনীপুর: আইন বলছে, অভিযুক্তকে নিজের কানে শুনতে হয় আদালতের রায়। এজলাসের ভিতরে দাঁড়িয়ে রায় শুনবেন তিনি। কিন্তু শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা সংক্রান্ত মামলায় ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল। বিচারক যখন রায় পড়ে শোনাচ্ছেন, তখন এজলাসের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর শুয়ে মৃত্যু পথযাত্রী আসামী। তাঁকে রায় শোনাতে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন বিচারক। এজলাসের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে থাকা আসামীর কাছে গিয়ে বিচারক জানিয়ে দিলেন, ‘আপনি দোষী। আপনাকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হল।’ এই ঘটনাকে এক কথায় নজিরবিহীন বলছে ওয়াকিবহাল মহল।
বিচারক সালিম শাহী মুখে রায় শুনে মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বুদ্ধেশ্বর মাহাতো ওরফে বুদ্ধদেব মাহাতো স্তব্ধ হয়ে যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন পাশে বসে থাকা তাঁর মা। মুহুর্মুহু চোখ মোছেন শাড়ির আঁচল দিয়ে।
শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন বুদ্ধেশ্বর মাহাতো ওরফে বুদ্ধদেব। ঘটনার সময় শিলদা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। আর আজ ৩৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুপথযাত্রী। কিডনির মারণ রোগে আক্রান্ত গত চার বছর ধরে। দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একদিন অন্তর ডায়ালিসিস করাতে হয়। মঙ্গলবার এজলাসে হাজির হওয়ার ক্ষমতাও ছিল না তাঁর। অ্যাম্বুল্যান্সে চেপেই আদালতে হাজির হন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা।
দোষী সাব্যস্ত হওয়া বুদ্ধদেবের মা নিয়তিদেবী বলছেন, “মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেকেও ছাড়ল না ওঁরা। ছেলের কী দোষ সেটাই এখনও জানতে পারলাম না! ২০১০ সালে ছেলেকে ধরেছে পুলিশ। তখন ও শিলদা কলেজে পড়ত। জেলের মধ্যেই কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়। কিছুদিন আগেই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয়। গতকালও ডায়ালিসিস করা হয়েছে। বুধবার ফের ডায়ালিসিস করাতে হবে।” কিন্তু ছেলে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফের হেফাজতে ঢুকে যাওয়ায় কীভাবে তাঁর চিকিৎসা হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না নিয়তিদেবী। তাঁর দাবি, ‘লাই ডিটেক্টর’ থেকে শুরু করে এখন অনেক উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বেরিয়েছে শুনেছি। সেইসব পরীক্ষা করা হোক। তাতে যদি তাঁর ছেলে দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তার ফাঁসি হোক কিন্তু তা যদি না হয় অন্ততঃপক্ষে জীবনের শেষ কটাদিন তাঁর পরিবারের সঙ্গে যেন শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.