দীপঙ্কর মণ্ডল: রাজ্যে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠক্রমে ঢুকে পড়ল COVID-19। সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত এই মারণ জীবাণু। এ রাজ্যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও COVID-19 নিয়ে পড়াশোনা শুরু হয়নি সেভাবে, সিলেবাসে ঢোকানো তো দূরের কথা। রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় সেদিক থেকে গোটা রাজ্যকে পথ দেখাল বলেই মনে করছেন শিক্ষামহলের একটা বড় অংশ।
উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কর জানিয়েছেন, “বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গোটা পুরুলিয়া জুড়ে কাজ করছে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য নয়, শবর-বেদিয়া-মাহালির মতো প্রান্তিক মানুষদের পাশেও আমরা আছি। প্রত্যেক দিন কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে আহারের ব্যবস্থা হয়েছে। পাশাপাশি স্নাতকোত্তরে সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি হিসাবশাস্ত্র, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শনের মতো বেশ কিছু বিষয়ের Dissertation পেপার বা প্রজেক্টের জন্য এবার COVID-19 বিষয়ে বরাদ্দ থাকবে ৫০ নম্বর।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তৈরি করে তা বিলি করছি। প্রত্যেকদিন বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য শুরু হয়েছে ই-লার্নিং। ছৌ নাচ নিয়ে আলাদা একটা টিম কাজ করছে।”
প্রসঙ্গত, অযোধ্যা পাহাড়ের দুর্গম গ্রামের ভিতরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসএসের ছাত্র ছাত্রীরা গিয়ে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন। রাজ্যের জরুরি ত্রাণ তহবিলে ইতিমধ্যেই সবাই চাঁদা তুলে ১০ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও আরও একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন আটকে থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মনে অবসাদ আসতে পারে, একথা ভেবে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগ অনলাইনে কাউন্সেলিং শুরু করেছে।
পুরুলিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্যও আলাদা প্রকল্প নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ‘মানবিক’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের এক হাজার টাকা করে অনুদান দেয়। কিন্তু অনেকেই সেই প্রকল্পে নাম লেখাননি। এমন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীকে খুঁজে বের করে তাঁদের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক তুলে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও কর্মীরা। উপাচার্য দীপক বাবু জানিয়েছেন, “করোনা সতর্কতায় লকডাউন চলছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ কাজে বেরোতে পারছেন না। কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন সেই লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। দারিদ্র সীমার নিচে থাকা ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এসবের বাইরেও কী করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বাড়ানো যায়, তার প্রচার চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ইমিউন ভিলেজ’ গঠন করবে বলে জানিয়েছে। এই ভাবনাতেও দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়েছে প্রান্তিক জেলার বিশ্ববিদ্যালয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.